ঢাকা ১২:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
লামা ফাঁসিয়াখালীর শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসাস্থল হায়দারনাশী গ্রামার স্কুল বাগেরহাটে ঐতিহ্যকে মেলে ধরে রাখতে পিঠা উৎসব মধুপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে পিতাপুত্রের মৃত্যু মোরেলগঞ্জে জালনোট প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত মধুপুরে বিয়ের ৭ মাস পর গৃহ বধূর রহস্য জনক মৃত্যু নড়াইলের গোবরায় মৎস্য খামারে বিষ প্রয়োগ ৬ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন দুই বছর যাবত মায়ানমার কারাগারে বন্দী লামার ছেলে আবুল মোছা ইসলামপুরে মোটর সাইকেল সংঘর্ষে এক কিশোরের মৃত্যু আহত ২ সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর উত্তরার লাভলীন রেস্টুরেন্টের আগুন নিয়ন্ত্রণে এস আলম ও তার পরিবারের ১২৫ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ

একটি রাজনৈতিক তকমা এবং ১৭ বছরের বঞ্চনা

  • আপডেট সময় : ১২:২৪:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৪
  • ৩০৬৪ বার পড়া হয়েছে

 

২০০৫ সালে আমি আলিম প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। ২০০৬ সালে আলিম ২য় বর্ষে অধ্যয়নকালে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক অবচিল পত্রিকায় বাঁশখালী প্রতিনিধি হিসেবে রিপোর্টিং এর কাজ শুরু করি। এরপর ২০০৮ সাল থেকে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় আনোয়ারা-বাঁশখালী প্রতিনিধি হিসেবে দৈনিক পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু। ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দৈনিক কর্ণফুলী, দৈনিক দিনকাল, দৈনিক সাঙ্গু ও দৈনিক প্রিয় চট্টগ্রামে আনোয়ারা-কর্ণফুলী ও বাঁশখালী প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছি। এরই ফাঁকে ২০১৪-২০১৬ সালে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত কুরিয়ান ইপিজেডে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।

২০১৮ সাল থেকে চট্টগ্রাম মহানগরে নিউজ বিএনএ, জাস্ট নিউজ, দৈনিক সাঙ্গু ও দৈনিক সকালের সময়ে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছি।

২০১২ সালের পর থেকে আমাদের গায়ে একটি তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয় আমরা বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাংবাদিক। আরও একটু আগ বাড়িয়ে বলা হতো রাজাকারপন্থী।
এরইমধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে অনেকগুলো পত্রিকা প্রকাশিত হয়। অনেকগুলো পত্রিকায় ইন্টারভিউ দিই, ভালো রেজাল্টও করি। কিন্তু চাকুরি হয় না। কারণ গায়ে একটি তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় পরীক্ষা দিয়েছিলাম। অনেকের মধ্যে আমার রেজাল্টা ভালো হয়। তৎকালীন পত্রিকাটির সম্পাদক ওসমান গনি মনসুর আমার কাছ থেকে ভাইবা পরীক্ষা নেয়। সব ওকে। নিয়োগপত্রও তৈরি। কিন্তু বিপত্তি ঘটে অন্য জায়গায়, ওখানে কর্মরত জিয়া নামের একজন আমাকে বানিয়ে দেয় বিএনপি-জামায়াত। আর চাকুরি হয়নি। অথচ পূর্বদেশ পত্রিকার মালিক আর আমাদের বাড়ির দূরত্ব মাত্র ২ কিলোমিটার।

এভাবে তকমা লাগিয়ে বছরের পর বছর বঞ্চিত করে রাখা হয় আমার মতো অনেকজনকে। আমাদের যোগ্যতা থাকা সত্তেও আমরা বঞ্চিত হতে থাকলাম। ভালো রেজাল্ট করলেও কাজ হয় না। আবার একটু সাহসের সাথে রিপোর্ট করলেও বিএনপি-জামায়াত তকমা লাগিয়ে ধমিয়ে রাখা হতো, মনের মধ্যে এক অজানা ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হতো।

সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো, আমাদের বয়সে ছোটো, কোনো পেশাদারিত্ব নাই, সরকারি দলের সমর্থক সেজে রাতারাতি সাংবাদিক বনে গিয়ে রাতারাতি কেউ প্রেস ক্লাবের সভাপতি, কেউ ইউনিয়নের সদস্য, আবার বড়ো সাংবাদিক নেতা বনে গেছেন। এরা নিউজের দুটি লাইন লিখতে না জানলেও হাবভাব দেখে মনে হবে অনেক বড়ো সাংবাদিক!! থানা পুলিশ থেকে শুরু করে সরকারি দলের বড়ো বড়ো নেতাদের সাথে দহরমহরম সম্পর্ক তৈরি করে বড়ো মাপের সাংবাদিক বনে যায় রাতারাতি । ভাগ- ভাটোয়ারা থেকে শুরু করে সবখানে এদের আধিপত্য। প্রেসক্লাবগুলোকে বানানো হয়েছে দলীয় আখড়া। বিগত ১৭ বছরে বিএনপি-জামায়াত তকমা দিয়ে মাঠ পর্যায়ের অনেক পেশাদার সাংবাদিককে সদস্যপদ দেওয়া হয়নি অনেকগুলো প্রেসক্লাব এবং সাংবাদিক ইউনিয়নে। যোগ্যতা থাকা সত্তেও রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে বহু সাংবাদিককে পথের পথিক বানানো হয়েছে।

একসময় মানুষ প্রশ্ন করে এরা কী সাংবাদিক! নাকি দলের নেতাকর্মী!! মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলে। প্রশ্ন তৈরি হয় সাংবাদিকতার পেশাদারিত্ব নিয়ে। এসব সাংবাদিকদের অনেকে এখন লাপাত্তা! কারও দেখা নাই। ঘরবাড়ি ছাড়া। এ যেনো এক বিরল ঘটনা। রাজনৈতিক নেতাদের মতো তারাও কোথাও উধাও হয়ে গেছেন। কী এক অদ্ভুত ব্যাপার!! সাংবাদিক কেনো পালিয়ে যাবে? তার তো কোনো দল নেই, মত নেই, সে তো সবার। সে তো পার্থক্য করতে পারে না। কিন্তু না! বিগত ১৭ বছরে আমার তার উল্টো চিত্রই দেখলাম। যার কারণে আজ রাজনৈতিক নেতাদের মতো সাংবাদিকদেরও পালিয়ে যেতে হয়।

আমাদেরকে অন্যায়ভাবে তকমা লাগিয়ে বছরের পর বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। সরকার বিরোধী হিসেবে তকমা লাগিয়ে ক্যারিয়ার গঠন থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা অনেক বঞ্চনার শিকার হলাম। অধিকারহারা হলাম। আমার মতো অনেক সিনিয়র ভাই বেকারত্বের গ্লানি নিয়ে পড়ন্ত বেলায় পৌঁছে গেছেন। অনেকে পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে গেছেন। জীবন বাঁচার তাগিদে অনেক সাংবাদিক দেশে ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।

আমরা দেখলাম সরকার পতনের পর দেশের অধিকাংশ প্রেসক্লাব ও ইউনিয়নে অধিকার ও পদবঞ্চিতরা অবস্থান নিয়েছেন। এটা একদিনের বঞ্চনা নয়, দীর্ঘ ১৭ বছরের বঞ্চনা।

প্রশ্ন করুন নিজেকে! কী লাভ হলো এতকিছুর পর? রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে আমাদের মতো যাদেরকে দীর্ঘ একটি সময় বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল, আমরা কিন্তু পেশা থেকে সরে দাঁড়ায়নি। একদিনের জন্যও সরকারি কোনো দলের নেতার আশ্রয় চাইনি। এত তকমা লাগানোর পরও কোথাও পালিয়ে যাইনি। পালিয়ে যেতে হয়নি।

কারণ কেন জানেন? ২০০৬ সালের পর থেকে একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে পরিচিত হয়েছিলাম।কখনো কোনো দল কিংবা মতের প্রতি অন্ধ ভক্ত ছিলাম না। কারণ শুরু থেকে একটা বিশ্বাস মাথায় নিয়ে কাজ করতাম, সাংবাদিকতা কোনো দলের না, কোনো মতের না, সাংবাদিকতা সত্য ও ন্যায়ের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিপীড়িত মানুষের পক্ষে। যদি নজরুলের ভাষায় বলি তাহলে বলতে হয় সাংবাদিকতা হলো ” অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস”

কাজ করতে গিয়ে ডান-বামপন্থী ঘরনার অধিকাংশ সাংবাদিকদের সাথে উঠাবসা এবং চলাফেরা হয়েছে, এখনো হচ্ছে। কিন্তু কেউ বলতে পারবেননা আমি দলকানা ছিলাম। এরপরও একটি পক্ষ আমাদেরকে বিএনপি-জামায়াত জামায়াতপন্থী সাংবাদিক বানিয়ে আমাদেরকে কর্মহারা হারা করেছে, ক্যারিয়ার গঠন থেকে বঞ্চিত করেছে। আমাদের যৌবন এবং তারুণ্যের একটি বয়স বঞ্চনার মধ্যে চলে গেছে। এই সময়তো আর ফিরে পাব না। এটা আমাদের প্রতি বড়ো অবিচার করা হয়েছে।

আল্লাহ ছাড় দেন- ছেড়ে দেননা। সেই সরকারি দলের দলকানা সাংবাদিকরা আজ রাজনৈতিক নেতাদের মতো লাপাত্তা, কোনো খুঁজ নাই, কোথাও উধাও হয়ে গেছেন। এটা তাদের কর্মের পরিণতি। এটা আল্লাহর পক্ষে তাদের জন্য কর্মের ফয়সালা।

কিন্তু আমাদেরকে পালিয়ে যেতে হয়নি। আমরা ছিলাম- আমরা আছি- আমরা থাকবো ইনশাআল্লাহ, আমরা আবারও ঘুরে দাঁড়াবো। আবারও মানুষের জন্য কাজ করবো, তবে সেটা কখনো দলকানা হয়ে নয়- পেশাদারিত্ব নিয়ে, সত্য এবং ন্যায়কে ধারণ করে।
সবার জন্য শুভকামনা।

সাঈফী আনোয়ারুল আজীম
চট্টগ্রাম,১৪ আগস্ট ২০২৪

 

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

লামা ফাঁসিয়াখালীর শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসাস্থল হায়দারনাশী গ্রামার স্কুল

একটি রাজনৈতিক তকমা এবং ১৭ বছরের বঞ্চনা

আপডেট সময় : ১২:২৪:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৪

 

২০০৫ সালে আমি আলিম প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। ২০০৬ সালে আলিম ২য় বর্ষে অধ্যয়নকালে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক অবচিল পত্রিকায় বাঁশখালী প্রতিনিধি হিসেবে রিপোর্টিং এর কাজ শুরু করি। এরপর ২০০৮ সাল থেকে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় আনোয়ারা-বাঁশখালী প্রতিনিধি হিসেবে দৈনিক পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু। ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দৈনিক কর্ণফুলী, দৈনিক দিনকাল, দৈনিক সাঙ্গু ও দৈনিক প্রিয় চট্টগ্রামে আনোয়ারা-কর্ণফুলী ও বাঁশখালী প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছি। এরই ফাঁকে ২০১৪-২০১৬ সালে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত কুরিয়ান ইপিজেডে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।

২০১৮ সাল থেকে চট্টগ্রাম মহানগরে নিউজ বিএনএ, জাস্ট নিউজ, দৈনিক সাঙ্গু ও দৈনিক সকালের সময়ে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছি।

২০১২ সালের পর থেকে আমাদের গায়ে একটি তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয় আমরা বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাংবাদিক। আরও একটু আগ বাড়িয়ে বলা হতো রাজাকারপন্থী।
এরইমধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে অনেকগুলো পত্রিকা প্রকাশিত হয়। অনেকগুলো পত্রিকায় ইন্টারভিউ দিই, ভালো রেজাল্টও করি। কিন্তু চাকুরি হয় না। কারণ গায়ে একটি তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় পরীক্ষা দিয়েছিলাম। অনেকের মধ্যে আমার রেজাল্টা ভালো হয়। তৎকালীন পত্রিকাটির সম্পাদক ওসমান গনি মনসুর আমার কাছ থেকে ভাইবা পরীক্ষা নেয়। সব ওকে। নিয়োগপত্রও তৈরি। কিন্তু বিপত্তি ঘটে অন্য জায়গায়, ওখানে কর্মরত জিয়া নামের একজন আমাকে বানিয়ে দেয় বিএনপি-জামায়াত। আর চাকুরি হয়নি। অথচ পূর্বদেশ পত্রিকার মালিক আর আমাদের বাড়ির দূরত্ব মাত্র ২ কিলোমিটার।

এভাবে তকমা লাগিয়ে বছরের পর বছর বঞ্চিত করে রাখা হয় আমার মতো অনেকজনকে। আমাদের যোগ্যতা থাকা সত্তেও আমরা বঞ্চিত হতে থাকলাম। ভালো রেজাল্ট করলেও কাজ হয় না। আবার একটু সাহসের সাথে রিপোর্ট করলেও বিএনপি-জামায়াত তকমা লাগিয়ে ধমিয়ে রাখা হতো, মনের মধ্যে এক অজানা ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হতো।

সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো, আমাদের বয়সে ছোটো, কোনো পেশাদারিত্ব নাই, সরকারি দলের সমর্থক সেজে রাতারাতি সাংবাদিক বনে গিয়ে রাতারাতি কেউ প্রেস ক্লাবের সভাপতি, কেউ ইউনিয়নের সদস্য, আবার বড়ো সাংবাদিক নেতা বনে গেছেন। এরা নিউজের দুটি লাইন লিখতে না জানলেও হাবভাব দেখে মনে হবে অনেক বড়ো সাংবাদিক!! থানা পুলিশ থেকে শুরু করে সরকারি দলের বড়ো বড়ো নেতাদের সাথে দহরমহরম সম্পর্ক তৈরি করে বড়ো মাপের সাংবাদিক বনে যায় রাতারাতি । ভাগ- ভাটোয়ারা থেকে শুরু করে সবখানে এদের আধিপত্য। প্রেসক্লাবগুলোকে বানানো হয়েছে দলীয় আখড়া। বিগত ১৭ বছরে বিএনপি-জামায়াত তকমা দিয়ে মাঠ পর্যায়ের অনেক পেশাদার সাংবাদিককে সদস্যপদ দেওয়া হয়নি অনেকগুলো প্রেসক্লাব এবং সাংবাদিক ইউনিয়নে। যোগ্যতা থাকা সত্তেও রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে বহু সাংবাদিককে পথের পথিক বানানো হয়েছে।

একসময় মানুষ প্রশ্ন করে এরা কী সাংবাদিক! নাকি দলের নেতাকর্মী!! মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলে। প্রশ্ন তৈরি হয় সাংবাদিকতার পেশাদারিত্ব নিয়ে। এসব সাংবাদিকদের অনেকে এখন লাপাত্তা! কারও দেখা নাই। ঘরবাড়ি ছাড়া। এ যেনো এক বিরল ঘটনা। রাজনৈতিক নেতাদের মতো তারাও কোথাও উধাও হয়ে গেছেন। কী এক অদ্ভুত ব্যাপার!! সাংবাদিক কেনো পালিয়ে যাবে? তার তো কোনো দল নেই, মত নেই, সে তো সবার। সে তো পার্থক্য করতে পারে না। কিন্তু না! বিগত ১৭ বছরে আমার তার উল্টো চিত্রই দেখলাম। যার কারণে আজ রাজনৈতিক নেতাদের মতো সাংবাদিকদেরও পালিয়ে যেতে হয়।

আমাদেরকে অন্যায়ভাবে তকমা লাগিয়ে বছরের পর বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। সরকার বিরোধী হিসেবে তকমা লাগিয়ে ক্যারিয়ার গঠন থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা অনেক বঞ্চনার শিকার হলাম। অধিকারহারা হলাম। আমার মতো অনেক সিনিয়র ভাই বেকারত্বের গ্লানি নিয়ে পড়ন্ত বেলায় পৌঁছে গেছেন। অনেকে পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে গেছেন। জীবন বাঁচার তাগিদে অনেক সাংবাদিক দেশে ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।

আমরা দেখলাম সরকার পতনের পর দেশের অধিকাংশ প্রেসক্লাব ও ইউনিয়নে অধিকার ও পদবঞ্চিতরা অবস্থান নিয়েছেন। এটা একদিনের বঞ্চনা নয়, দীর্ঘ ১৭ বছরের বঞ্চনা।

প্রশ্ন করুন নিজেকে! কী লাভ হলো এতকিছুর পর? রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে আমাদের মতো যাদেরকে দীর্ঘ একটি সময় বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল, আমরা কিন্তু পেশা থেকে সরে দাঁড়ায়নি। একদিনের জন্যও সরকারি কোনো দলের নেতার আশ্রয় চাইনি। এত তকমা লাগানোর পরও কোথাও পালিয়ে যাইনি। পালিয়ে যেতে হয়নি।

কারণ কেন জানেন? ২০০৬ সালের পর থেকে একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে পরিচিত হয়েছিলাম।কখনো কোনো দল কিংবা মতের প্রতি অন্ধ ভক্ত ছিলাম না। কারণ শুরু থেকে একটা বিশ্বাস মাথায় নিয়ে কাজ করতাম, সাংবাদিকতা কোনো দলের না, কোনো মতের না, সাংবাদিকতা সত্য ও ন্যায়ের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিপীড়িত মানুষের পক্ষে। যদি নজরুলের ভাষায় বলি তাহলে বলতে হয় সাংবাদিকতা হলো ” অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস”

কাজ করতে গিয়ে ডান-বামপন্থী ঘরনার অধিকাংশ সাংবাদিকদের সাথে উঠাবসা এবং চলাফেরা হয়েছে, এখনো হচ্ছে। কিন্তু কেউ বলতে পারবেননা আমি দলকানা ছিলাম। এরপরও একটি পক্ষ আমাদেরকে বিএনপি-জামায়াত জামায়াতপন্থী সাংবাদিক বানিয়ে আমাদেরকে কর্মহারা হারা করেছে, ক্যারিয়ার গঠন থেকে বঞ্চিত করেছে। আমাদের যৌবন এবং তারুণ্যের একটি বয়স বঞ্চনার মধ্যে চলে গেছে। এই সময়তো আর ফিরে পাব না। এটা আমাদের প্রতি বড়ো অবিচার করা হয়েছে।

আল্লাহ ছাড় দেন- ছেড়ে দেননা। সেই সরকারি দলের দলকানা সাংবাদিকরা আজ রাজনৈতিক নেতাদের মতো লাপাত্তা, কোনো খুঁজ নাই, কোথাও উধাও হয়ে গেছেন। এটা তাদের কর্মের পরিণতি। এটা আল্লাহর পক্ষে তাদের জন্য কর্মের ফয়সালা।

কিন্তু আমাদেরকে পালিয়ে যেতে হয়নি। আমরা ছিলাম- আমরা আছি- আমরা থাকবো ইনশাআল্লাহ, আমরা আবারও ঘুরে দাঁড়াবো। আবারও মানুষের জন্য কাজ করবো, তবে সেটা কখনো দলকানা হয়ে নয়- পেশাদারিত্ব নিয়ে, সত্য এবং ন্যায়কে ধারণ করে।
সবার জন্য শুভকামনা।

সাঈফী আনোয়ারুল আজীম
চট্টগ্রাম,১৪ আগস্ট ২০২৪