গত ২০১৮ সালে ডাকাতির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দের জেরে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অস্ত্রধারী ও আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সর্দার মোঃ মজিবর আকন টেক্কা (৪৯) ও তার অন্য দুই সহযোগী রুহুল আমিন লেদু (৪৩) ও মোঃ সামিম হোসেন (৩৩) এর হাতেই তাদের ডাকাত দলের আরেক সক্রিয় সদস্য আজাহার অরপে আজাদ (৩৩) চাপাতি ও কাচির আঘাতে নির্মমভাবে খুন হন।
পরবর্তীতে ভিকটিম আজাহার আজাদ (৩৩) এর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে সাভারের তুরাগ নদীতে ফেলে দেন। উল্লিখিত নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় রুজু হওয়া মামলার রহস্য উদঘাটন সহ ঘটনার সাথে জড়িত আসামী ডাকাত সর্দার ১। মোঃ মজিবর আকন টেক্কা (৪৯) ও তার অপর এক সহযোগী মোঃ সামিম হোসেন (৩৩) দ্বয়কে গত ৯ মে ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে গ্রেফতার করেছে পিবিআই ঢাকা জেলা।
আজ ১০ জুন ২০২৪ তারিখ সকাল ১১.৩০ টায় পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার বিস্তারিত তুলেন ধরেন পিবিআই ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোঃ কুদরত-ই-খুদা। এ সময় পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের পুলিশ সুপার (সিআরও এন্ড মিডিয়া) মোঃ আবু ইউসুফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ খ্রিঃ তারিখ দুপুর অনুমান ০২.ঘটিকার সময়ে ভিকটিম মোঃ আজাহার আজাদ (৩৩) তার বড় ভাই মোঃ শাজাহান (৩৫) এর বাসা হতে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বের হয়। পরবর্তীতে যথাসময়ে ভিকটিম বাসায় না ফেরায় পরিবারের লোকজন তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ভিকটিমের বড় ভাই মোঃ শাজাহান জানতে পারেন ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানাধীন আমিনবাজার হিজলা সাকিনস্থ তুরাগ নদীর পূর্বপাশে নদীতে একটি লাশ ভাসছে।
সংবাদ পেয়ে গত ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ খ্রিঃ দুপুর অনুমান ২. ঘটিকার সময়ে ভিকটিমের বড় ভাই ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় লাশ তীরে উঠায় এবং তার ছোট ভাই ভিকটিম আজাহার আজাদ এর লাশ বলে সনাক্ত করেন। এই ঘটনায় ভিকটিমের ভাই মোঃ শাজাহান (৩৫) বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানার মামলা নং ৪৪, গত ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করেন।
সাভার মডেল থানা পুলিশ গত ৭ জানুয়ারি ২০১৯ খ্রিঃ তারিখ পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করেন। মামলাটি পিবিআই এর সিডিউলভূক্ত হওয়ায়, পিবিআই হেডকোয়াটার্র্স, ঢাকার নির্দেশে ৮ জানুয়ারি ২০১৯ খ্রিঃ তারিখে পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন।
পিবিআই প্রধান অ্যাডিশনাল আইজিপি,বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পুলিশ সুপার, পিবিআই ঢাকা জেলা মোঃ কুদরত-ই-খুদা এর সার্বিক দিক নির্দেশনায় পিবিআই ঢাকা জেলার এসআই (নিঃ) মোঃ শহিদুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করেন। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) মোঃ শহিদুল ইসলাম এর নেতৃত্বে পিবিআই ঢাকা জেলার একটি চৌকস টিমের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ৬ (ছয়) বছর পূর্বের হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন সহ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ২ জন আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গত ৯ মে ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে বিকাল অনুমান ৪.১০ ঘটিকায় হত্যাকান্ডের ঘটনায় সন্ধিগ্ধ জড়িত আসামী মোঃ মজিবর আকন টেক্কা (৪৯)কে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের পূবাইল থানার মাজুখান বাগেরটেক এলাকায় তার ভাড়া বাসা (জনৈক রফিকুল ইসলাম এর বাসা) থেকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী মোঃ মজিবর আকন টেক্কা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে এবং তার দেওয়া তথ্য মতে ঘটনার সাথে সন্ধিগ্ধ জড়িত অপর আসামী মোঃ সামিম হোসেন (৩৩)’কে একই তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ৬.৪৫ ঘটিকায় ডিএমপি’র শাহআলী থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে আসামীদ্বয় ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।
বিজ্ঞ আদালতে আসামীদ্বয়ের প্রদত্ত ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারার জবানবন্দি এবং তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় জানা যায় যে, আসামীদ্বয় একটি সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। উক্ত আসামীরা রাজধানীর পার্শ্ববর্তী সাভার এবং আশুলিয়া থানা এলাকাধীন তুরাগ নদীতে দীর্ঘদিন যাবৎ ডাকাতি সংগঠন করে আসছিল।
অত্র মামলার ভিকটিম মোঃ আজাহার আজাদ (৩৩) নিজেও উক্ত ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য ছিল। অত্র মামলার ঘটনার দিন গত ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ খ্রিঃ তারিখ রাত অনুমান ১১: ঘটিকার পরে আসামীদ্বয় এবং ভিকটিম আজাহার আজাদ এবং তাদের আরো ৪/৫ জন সঙ্গী সহ ডাকাতির উদ্দেশ্যে ট্রলারযোগে তুরাগ নদীর গাবতলী ঘাট এলাকা হতে আশুলিয়া’র উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে।
কিছুদূর যাওয়ার পরে ভিকটিম আজাহার আজাদের সাথে আসামী মজিবর আকন টেক্কা (৪৯) এবং মজিবরের সেকেন্ড ইন কমান্ড অপর আসামী রুহুল আমিন লেদু (৪৩)’র পূর্বের ডাকাতি থেকে প্রাপ্ত টাকার ভাগাভাগি নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হলে আসামী রুহুল আমিন লেদু ধারালো বড় কাঁচি (ডাকাতির কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে আগে থেকেই ট্রলারে রাখা) দিয়ে পিছন থেকে আজাহার আজাদ এর মাথায় পরপর তিনটি কোপ দেয়।
পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ মজিবর আকন টেক্কা (৪৯) চাপাতি (ডাকাতির কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে আগে থেকেই ট্রলারে রাখা) দিয়ে ভিকটিম আজাহার আজাদ এর বুকে একটি কোপ দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ভিকটিম আজাহার আজাদকে তুরাগ নদীতে ফেলে দিয়ে আসামীরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সর্দার মজিবর আকন টেক্কা (৪৯)’র বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত মোট ৯(নয়) টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। মজিবরের সেকেন্ড ইন কমান্ড রুহুল আমিন @ লেদু (৪৩)’র বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত মোট ৩(তিন) টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। আসামী রুহুল আমিন লেদু একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন।
গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ সামিম হোসেন এর বিরুদ্ধে ১ (এক) ডাকাতির মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। ডাকাত সর্দার মজিবর আকন টেক্কা’র আপন ভাই আনোয়ার হোসেন শামীম ও তাদের ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তার বিরুদ্ধেও এখন পর্যন্ত ৩(তিন) টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। ডাকাত সর্দার মজিবর আকন টেক্কা এবং তার ভাই আনোয়ার হোসেন শামীম একেবারেই গরীব ঘরের সন্তান ছিল। তাদের আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। কিন্তু বর্তমানে তারা ডাকাতি ও চাঁদাবাজির টাকায় গড়ে তুলছেন তাদের সাম্রাজ্য ডাকাতির টাকায় বাড়িতে গড়ে তুলেছেন বিশাল মাছের খামার। ডুপ্লেক্স বাড়ির নিমার্ণ শুরু করেছেন।
ডাকাত সর্দার মোঃ মজিবর আকন টেক্কা’র ১ম স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় ২০১৭ সালে ২য় বিবাহ করেন। ঢাকায় অপরাধ করে গাজীপুরে ২য় স্ত্রীর কাছে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে আত্মগোপনে থাকতেন। তুরাগ নদীর সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর অংশে বিভিন্ন মালবাহী ট্রলার, বালুবাহী ভলগেট ও অন্যান্য নৌ-যানে দীর্ঘদিন ধরেই ডাকাতি ও চাঁবাবাজি করে আসছিলেন।
কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই রাতের বেলা তার অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দলবল সহ ঐসকল ট্রলারে ডাকাতি করতেন। ট্রলারের লোকজনকে মারধর করে তাদের কাছে থাকা টাকা পয়সা ও ট্রলারের মূল্যবান জিনিসপত্র ডাকাতি করে নিয়ে আসতেন। পিবিআই ঢাকা জেলা কতৃর্ক আসামী মজিবর আকন টেক্কা’কে গ্রেফতার করার পর স্থানীয় বেশ কিছু ভিকটিম মামলা করতে চেয়েছিল কিন্তু আসামীরা জামিনে বের হয়ে পরবর্তীতে ভিকটিমদের ক্ষতি করতে পারে এ ভয়ে তারা মামলা করেনি।