ঢাকা ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
লামা ফাঁসিয়াখালীর শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসাস্থল হায়দারনাশী গ্রামার স্কুল বাগেরহাটে ঐতিহ্যকে মেলে ধরে রাখতে পিঠা উৎসব মধুপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে পিতাপুত্রের মৃত্যু মোরেলগঞ্জে জালনোট প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত মধুপুরে বিয়ের ৭ মাস পর গৃহ বধূর রহস্য জনক মৃত্যু নড়াইলের গোবরায় মৎস্য খামারে বিষ প্রয়োগ ৬ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন দুই বছর যাবত মায়ানমার কারাগারে বন্দী লামার ছেলে আবুল মোছা ইসলামপুরে মোটর সাইকেল সংঘর্ষে এক কিশোরের মৃত্যু আহত ২ সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর উত্তরার লাভলীন রেস্টুরেন্টের আগুন নিয়ন্ত্রণে এস আলম ও তার পরিবারের ১২৫ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ

হরিপুর, মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন

  • আপডেট সময় : ০২:৫৩:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ নভেম্বর ২০২৩
  • ৩২৮৬ বার পড়া হয়েছে

সিরাজুল ইসলাম ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:-ঠাকুরগাঁও জেলা সহ হরিপুর উপজেলায় হেমন্তের আগমনে বাতাসে মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। গ্রামীণ জনজীবনে নবান্ন উৎসব যেন এখন শুধুই স্মৃতি। হেমন্তকালে মাঠে মাঠে দেখা যায় দিগন্তবিস্তৃত সোনালি ধানের ক্ষেত। হেমন্তে বাংলার গ্রাম হেমবরণী। কমলা রোদে উজ্জ্বল সোনালি ধানের গুচ্ছ। এ সময় ধান সোনালি রঙ ধারণ করে। পাকা ধানের সোনালি রঙ দেখে কৃষকের মন আনন্দে ভরে যায়। এ ঋতু মমতাময়ী জননীর মতো কৃষকের গোলা ভরে দেয় সোনালি ধানে। হৈমন্তী ধানের মিষ্টি গন্ধে আমোদিত হয় চারদিক। ঢেঁকির তালে আর ধান ভানার গানে নবান্নের উৎসবে মেতে ওঠে গ্রামবাসী। গ্রাম-বাংলায় থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙ্গালী জাতির হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এবং সবচেয়ে প্রাচীনতম উৎসব নবান্ন। নবান্ন উৎসবকে মনে করা হতো অসাম্প্রদায়িক উৎসব। হেমন্ত ঋতুতে অর্থাৎ অগ্রহায়ণ মাসে কৃষকের নতুন বার্তা নিয়ে আমন ধানের আগমন।
হেমন্তকালে এ উৎসব ছিল সার্বজনীন। নবান্ন ঘিরে (নতুন ধান ঘরে তোলা উৎসব) গ্রামে গ্রামে চলত পিঠা-পুলি ও খির-পায়েশের উৎসব। হেমন্তে ধান কাটা উৎসবে যোগ হতো সারি সারি গরু ও মহিষের গাড়ি। মাঠে মাঠে কৃষকরা দল বেধে ধান কাটা উৎসবে যোগ দিতেন। আর গেয়ে উঠতেন জারি-সারি ভাটিয়ালিসহ নানা ধরনের গান। এক কোথায় গ্রামীণ জীবনে হেমন্তের আবহ ছিল অন্তপ্রাণে গাঁথা।
কৃষকের উৎপাদিত সোনালি ধানের সোনালি দিন। এ উৎসব বাঙালি জাতিকে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করে অথচ আজকের গ্রাম-বাংলার শিশুরা যেন স্বপ্নের মধ্যে নবান্নের উৎসবের ইতিকথা বাবা-মা কিংবা দাদা-দাদীর মুখে মুখে শুনে বিশেষ করে বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি জড়িয়ে আছে এই নবান্ন উৎসবে। অগ্রহায়ণ মাস এলেই গ্রাম-বাংলায় বোঝা যেত যে নবান্ন আসছে। গ্রাম-বাংলায় বসত পালাগান, লোকনাট্য, কেচ্ছা-কাহিনী, ভাওয়াইয়া গান, লালনগীতি ও বাউল গানের আসর। নাচ আর গানে মুখরিত হতো গ্রাম বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল। বাংলাদেশে বর্তমান পালাগান আর বাউল গানের আসর বিপন্ন প্রায়, তেমন আর চোখে পড়ে না, নবান্ন উৎসবের সেই নতুন ধানের আলো চাল ও সেই চালের আটা দিয়ে মুড়ি-মুড়কি, খৈ, পাটিসাপ্টা, ভাপা পিঠা, পায়েশসহ নানা ধরনের পিঠার আয়োজন।ভাত বাঙ্গালী জাতির প্রধান খাদ্য, আর এই চাল আসে ধান থেকে। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের জুরি নেই তবে, এবার সারা দেশের ন্যায় দেশের উওর অঞ্চল ঠাকুর গাঁও জেলায় আমন ধান চাষ করা হয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, এ বছর জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৬৪৪ হেক্টর জমি। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩৫৫ মেট্রিক টন। যা গত বছরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর। আবাদ হয়েছিল ১৮ হাজার ৬৪০ হেক্টর। যাতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ২৯ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন।হরিপুর উপজেলার কৃষক আবুল হোসেন জানান আমি প্রায় ৭-৮জমিতে আমন ধান চাষ করেছি আবহাওয়া অনুকূল এবছর ভালো হওয়ায় পোকার আক্রমন খুব কম হওয়া ধান ভালো হয়েছে বিঘা প্রতি ২০-২৫মন ধান হতে পারে, এক সপ্তাহের ভিতর আমন ধান কাটা শুরু হবে। কৃষক শরিফুল জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর আমার ধান ভালো হয়েছে, প্রথমত বৃষ্টির অভাবে, আমন ধান চাষে একটু বিঘ্ন হলেও পর পরবর্তীতে সঠিক সময়ে বৃষ্টি হওয়ায়, আমন ধান ভালো হয়েছে তাছাড়া উপজেলায় এবছর ধানের ব্লাস্ট রোগ নেই বললেই চলে তবে কারেন্ট পোকা ও মাজরা ঘাস ফড়িং থেকে ধানের আক্রমণ কমাতে কীটনাশক ঔষধ ছিটাতে হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবছর বিঘা প্রতি ধান চাষে খরচ কম হয়েছে ।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

লামা ফাঁসিয়াখালীর শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসাস্থল হায়দারনাশী গ্রামার স্কুল

হরিপুর, মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন

আপডেট সময় : ০২:৫৩:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ নভেম্বর ২০২৩

সিরাজুল ইসলাম ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:-ঠাকুরগাঁও জেলা সহ হরিপুর উপজেলায় হেমন্তের আগমনে বাতাসে মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। গ্রামীণ জনজীবনে নবান্ন উৎসব যেন এখন শুধুই স্মৃতি। হেমন্তকালে মাঠে মাঠে দেখা যায় দিগন্তবিস্তৃত সোনালি ধানের ক্ষেত। হেমন্তে বাংলার গ্রাম হেমবরণী। কমলা রোদে উজ্জ্বল সোনালি ধানের গুচ্ছ। এ সময় ধান সোনালি রঙ ধারণ করে। পাকা ধানের সোনালি রঙ দেখে কৃষকের মন আনন্দে ভরে যায়। এ ঋতু মমতাময়ী জননীর মতো কৃষকের গোলা ভরে দেয় সোনালি ধানে। হৈমন্তী ধানের মিষ্টি গন্ধে আমোদিত হয় চারদিক। ঢেঁকির তালে আর ধান ভানার গানে নবান্নের উৎসবে মেতে ওঠে গ্রামবাসী। গ্রাম-বাংলায় থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙ্গালী জাতির হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এবং সবচেয়ে প্রাচীনতম উৎসব নবান্ন। নবান্ন উৎসবকে মনে করা হতো অসাম্প্রদায়িক উৎসব। হেমন্ত ঋতুতে অর্থাৎ অগ্রহায়ণ মাসে কৃষকের নতুন বার্তা নিয়ে আমন ধানের আগমন।
হেমন্তকালে এ উৎসব ছিল সার্বজনীন। নবান্ন ঘিরে (নতুন ধান ঘরে তোলা উৎসব) গ্রামে গ্রামে চলত পিঠা-পুলি ও খির-পায়েশের উৎসব। হেমন্তে ধান কাটা উৎসবে যোগ হতো সারি সারি গরু ও মহিষের গাড়ি। মাঠে মাঠে কৃষকরা দল বেধে ধান কাটা উৎসবে যোগ দিতেন। আর গেয়ে উঠতেন জারি-সারি ভাটিয়ালিসহ নানা ধরনের গান। এক কোথায় গ্রামীণ জীবনে হেমন্তের আবহ ছিল অন্তপ্রাণে গাঁথা।
কৃষকের উৎপাদিত সোনালি ধানের সোনালি দিন। এ উৎসব বাঙালি জাতিকে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করে অথচ আজকের গ্রাম-বাংলার শিশুরা যেন স্বপ্নের মধ্যে নবান্নের উৎসবের ইতিকথা বাবা-মা কিংবা দাদা-দাদীর মুখে মুখে শুনে বিশেষ করে বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি জড়িয়ে আছে এই নবান্ন উৎসবে। অগ্রহায়ণ মাস এলেই গ্রাম-বাংলায় বোঝা যেত যে নবান্ন আসছে। গ্রাম-বাংলায় বসত পালাগান, লোকনাট্য, কেচ্ছা-কাহিনী, ভাওয়াইয়া গান, লালনগীতি ও বাউল গানের আসর। নাচ আর গানে মুখরিত হতো গ্রাম বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল। বাংলাদেশে বর্তমান পালাগান আর বাউল গানের আসর বিপন্ন প্রায়, তেমন আর চোখে পড়ে না, নবান্ন উৎসবের সেই নতুন ধানের আলো চাল ও সেই চালের আটা দিয়ে মুড়ি-মুড়কি, খৈ, পাটিসাপ্টা, ভাপা পিঠা, পায়েশসহ নানা ধরনের পিঠার আয়োজন।ভাত বাঙ্গালী জাতির প্রধান খাদ্য, আর এই চাল আসে ধান থেকে। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের জুরি নেই তবে, এবার সারা দেশের ন্যায় দেশের উওর অঞ্চল ঠাকুর গাঁও জেলায় আমন ধান চাষ করা হয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, এ বছর জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৬৪৪ হেক্টর জমি। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩৫৫ মেট্রিক টন। যা গত বছরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর। আবাদ হয়েছিল ১৮ হাজার ৬৪০ হেক্টর। যাতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ২৯ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন।হরিপুর উপজেলার কৃষক আবুল হোসেন জানান আমি প্রায় ৭-৮জমিতে আমন ধান চাষ করেছি আবহাওয়া অনুকূল এবছর ভালো হওয়ায় পোকার আক্রমন খুব কম হওয়া ধান ভালো হয়েছে বিঘা প্রতি ২০-২৫মন ধান হতে পারে, এক সপ্তাহের ভিতর আমন ধান কাটা শুরু হবে। কৃষক শরিফুল জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর আমার ধান ভালো হয়েছে, প্রথমত বৃষ্টির অভাবে, আমন ধান চাষে একটু বিঘ্ন হলেও পর পরবর্তীতে সঠিক সময়ে বৃষ্টি হওয়ায়, আমন ধান ভালো হয়েছে তাছাড়া উপজেলায় এবছর ধানের ব্লাস্ট রোগ নেই বললেই চলে তবে কারেন্ট পোকা ও মাজরা ঘাস ফড়িং থেকে ধানের আক্রমণ কমাতে কীটনাশক ঔষধ ছিটাতে হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবছর বিঘা প্রতি ধান চাষে খরচ কম হয়েছে ।