আগামী ১১ নভেম্বর দোহাজারী-কক্সবাজার রেল চলাচল উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে নিয়ম রক্ষার ট্রায়াল রান (পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল) সম্পন্ন করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। একই সাথে পরিদর্শনও সম্পন্ন করেছে সরকারি রেল পরিদর্শন অধিদপ্তর (জিআইবিআর)।
গত রোববার (৫ নভেম্বর) ২৯২৫ সিরিজের ইঞ্জিন ও ৮টি কোচ (৮/১৬) নিয়ে এই ট্রায়াল রান চালানো হয়েছে। জিআইবিআর প্রধান রুহুল কাদের আজাদ, রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক নাজমুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক সুবক্তগীন, অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক কালাম চৌধুরী, রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়াসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন। প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ৪ নভেম্বর ২২০০, ২৯০০ ও ৩০০০ সিরিজের ইঞ্জিন চালিয়ে শুধুমাত্র মেরামত করা কালুরঘাট সেতুর উপর পরীক্ষা চালিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে সুত্রে জানা যায়, আগামী ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-কক্সবাজার সরাসরি রেল চলাচল উদ্বোধন করবেন। ২২০০ থেকে ৩০০০ সিরিজের ইঞ্জিন দিয়ে ১২ টি কোচ নিয়ে নিয়মিত ট্রেন চলাচল করবে। এই উপলক্ষে সঠিক নিয়ম না মেনে তরিঘরি করে দায়সাড়াভাবে এটির ট্রায়াল রান সম্পন্ন করতে চাইছে রেল কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নিয়মিত যেসব ইঞ্জিন চলবে সেসব ইঞ্জিন এবং ওই পরিমান কোচ নিয়ে ট্রায়াল রান করা উচিৎ। প্রথমে অপেক্ষাকৃত কম বগি, কোচ ও কম ওজনের ইঞ্জিন দিয়ে পরীক্ষা চালালেও পুরোপুরি চালুর আগে সমপরিমান ও সমমানের ইঞ্জিন দিয়ে পরীক্ষা চালোনো উচিত। কারন প্রকারভেদে ইঞ্জিনের ওজন এবং কোচের সংখ্যা অনুযায়ী ওজনের তারতম্য থাকে। তাহলে কম ওজন নিয়ে ট্রায়াল করার পরে বেশি ওজন নিয়ে ট্রের চলাচলে কোন সমস্যা হবে কিনা তা ধরা পড়বে না। তাই কম পরিমানে কোন ও পুরাতন ইঞ্জিন নিয়ে পরীক্ষা চালানো উচিৎ হয়নি। এই বিষয়ে সংশ্লিস্টদের গাফিলতি থাকতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে। যেহেতু একটি ট্রেনে প্রচুর পরিমানে যাত্রী থাকে কোন সমস্য হলে একদিকে যেমন ভোগান্তি বাড়বে অন্যদিকে প্রাণের ঝুঁকিও থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এব্যপারে দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের পরিচালক মো. সুবক্তগীন বলেন, ’আপতত ট্রায়াল রান সম্পন্ন হয়েছে, পরিদর্শন কাজ চলছে। পুরাতন ইঞ্জিন ও কোচের সংখ্যা কমের ব্যাপারে তিনি বলেন, সেটা যাচাই করার জন্য একটা সেট চট্টগ্রামে আছে, কালকে (মঙ্গলবার) কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। তবে সেটাকে ট্রায়াল রান বলা যাবেনা, জাস্ট পাহাড়া দিয়ে কক্সবাজার নিয়ে আসা হবে।’
এব্যপারে জানতে, রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলামের সরকারি মোবাইল নাম্বারে কল ও ক্ষুদে দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি বিধায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার। শুরুতে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়।