র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। বিভিন্ন সময়ে কিশোর গ্যাং কর্তৃক সংঘটিত চাঞ্চল্যকর অপরাধে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে র্যাব-১ জনগনের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
গত ১৫ জুলাই ২০২৩ ইং রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানাধীন খালাশপীর এলাকায় আখ ক্ষেতের ভিতর থেকে অজ্ঞাতনামা ৩০ বছর বয়সী মহিলা ও সদ্য প্রসূত কন্যা শিশুর লাশ উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এই ঘটনায় রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও লাশ গুমের মামলা করেন। যার নম্বর নং-২৬, তারিখ-১৫ জুলাই ২০২৩। নৃশংস এই হত্যাকান্ডটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও প্রিন্ট ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। উক্ত হত্যাকান্ডের প্রকৃত ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব-১ গোয়েন্দা নজদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুরের গাছা থানাধীন তারগাছ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের মূলহোতা ও প্রধান আসামি মোঃ মাসুদ মিয়া (৩৫)’কে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত মাসুদ উক্ত হত্যাকান্ডে তার সংশ্লিষ্টার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
দুপুরে কাওরানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গনমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন,গ্রেফতারকৃতরা বিগত ০৮/১০ বছর পূর্বে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন জামগড়া এলাকায় ১টি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকুরি করত। ২০২২ সালের ফ্রেরুয়ারি মাসে উক্ত গার্মেন্টসে ভিকটিম শান্তনা চাকরিতে যোগদান করে। একই কোম্পানীতে চাকুরীর সুবাদে ভিকটিমের সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। গ্রেফতারকৃত মাসুদের তথ্য মতে ভিকটিম শান্তনা বিবাহিতা এবং স্বামী কর্তৃক তালাক প্রাপ্তা।
গ্রেফতারকৃত মাসুদ ও ভিকটিমের প্রেমের সর্ম্পক গভীর হওয়ায় স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে আশুলিয়া এলাকায় ১টি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে এবং এক পর্যায়ে ভিকটিম অন্তঃস্বত্তা হয়। ভিকটিম শান্তনা মাসুদকে প্রতিনিয়ত বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে তাদের মাঝে ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত মাসুদ তার বাড়িতে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে ভিকটিম শান্তনা’কে ঢাকায় রেখে কিছু দিনের জন্য তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জে গমন করে। উল্লেখ্য গ্রেফতারকৃত মাসুদের পূর্বের বিবাহের বিষয়টি সম্পর্কে ভিকটিম শান্তনা অবগত ছিল না।
গত ১২ জুলাই ২০২৩ তারিখ ভিকটিম শান্তনা গ্রেফতারকৃত মাসুদের সন্ধানের উদ্দেশ্যে মাসুদের গ্রামের বাড়ি রংপুরে যায়। সেখানে গিয়ে ভিকটিম শান্তনা জানতে পারে যে, গ্রেফতারকৃত মাসুদ বিবাহিত ও তার ০১টি পুত্র সন্তান আছে। সেখানে ভিকটিম শান্তনা তার গর্ভজাত সন্তানের স্বীকৃতি এবং তাকে বিবাহ করার জন্য গ্রেফতারকৃত মাসুদকে চাপ প্রয়োগ করে। তখন গ্রেফতারকৃত মাসুদের প্রথম স্ত্রী ফরিদা তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত মাসুদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ভিকটিম শান্তনাকে বিবাহ ও কাবিনের প্রতিশ্রæতি প্রদান করে এবং ঢাকায় গিয়ে ঘর ভাড়া নিয়ে পূর্বের ন্যায় বসবাস শুরু করবে বলে আশ^স্ত করে।
পরিবর্তীতে গত ১৩ জুলাই ২০২৩ তারিখ গ্রেফতারকৃত মাসুদের খালা ভিকটিম শান্তনা’কে রংপুরের পীরগঞ্জ হতে ঢাকায় গমনের উদ্দেশ্যে গাড়ীতে উঠিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত মাসুদ ভিকটিম শান্তনার সাথে মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে গাড়ি থেকে নেমে তার বাড়িতে ফেরত আসার জন্য বলে।
ভিকটিম শান্তনা গাড়ি থেকে নেমে বাস স্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতারকৃত মাসুদের বাড়িতে যাওয়ার পথিমধ্যে খালাশপীর নামক স্থানে একটি বড় আখ ক্ষেতের নিকট আসলে গ্রেফতারকৃত মাসুদ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য আখ ক্ষেতে গমন করে এবং কৌশলে ভিকটিম শান্তনাকেও আখ খেতে নিয়ে যায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিম শান্তনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার পেছন থেকে ওড়না দিয়ে গলায় পেচিয়ে শ^াসরোধ করে এবং গলায় ও পেটে পা দিয়ে আঘাত করে। ফলে ভিকটিম শান্তনার গর্ভজাত সন্তান ভুমিষ্ঠ হয় এবং উভয়ে ঘটনা স্থলেই মৃত্যু বরণ করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।