বিড়ালকে প্রথম গৃহপালিত পশু হিসেবে গ্রহণ করা হয় প্রায় ১০০০০ বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যে।
কিন্তু গবেষকদের মতে বিড়ালের মানুষের সাথে মানিয়ে নেওয়ার অভিযোজন আজও চলছে।
অনেকের মতে এই স্বভাবের জন্যই হয়ত তাদের মানুষের প্রতি ভালোবাসা বা প্রভুভক্তিটা একটু কম। গবেষকদের মতে বিড়াল একমাত্র অসামাজিক প্রাণী যে মানুষের পোষ মেনে মানুষের সাথে থাকতে শুরু করেছে। পৃথিবীর প্রায় ২৫% লোকের প্রিয় পোষা প্রাণী বিড়াল। কোন কোন দেশে বিড়াল কুকুরের থেকেও বেশি জনপ্রিয় গৃহপালিত প্রাণী। বেশি কিছু প্রাচীন সভ্যতা যেমন ইজিপশিয়ান সভ্যতায় বিড়াল কে পবিত্র প্রাণী হিসেবে গণ্য করা হত।
বিড়াল তার মালিকের প্রতি ভালবাসা বোঝায় গায়ে গা ঘষে। নিন্দুকেরা বলে তারা এটা শুধু খিদে পেলেই করে। নইলে তাদের বয়েই গেছে। পরবর্তীতে বুনো বিড়াল আর গৃহপালিত বিড়ালের ওপর তুলনামূলক গবেষণা করে জানা যায় বিড়াল মনিবের গায়ে গা ঘষে যায় তার ঘ্রাণ মনিবের শরীরে আর মনিবের ঘ্রাণ তার শরীরে মাখিয়ে একধরনের মিশ্র ঘ্রাণ তৈরি করার উদ্দেশ্যে। একই কাজ বিড়াল তার সঙ্গী বিড়ালের ক্ষেত্রেও করে। এতে করে তারা শত্রু মিত্র আলাদা করে চিনতে পারে।
আরেকটা প্রচলিত বিশ্বাস আছে- “মনিবের থাকা না থাকায় বিড়ালের কিছু যায় আসে না”।
এই তত্ত্বের সত্যতা নির্ণয় করার জন্য একটা পরীক্ষা করা হয়েছিল। যারা কুকুর বিড়াল দুটোই পোষেন তাদের থেকে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী বাছাই করা হল। তারা তাদের পোষাপ্রাণীগুলোকে বাড়িতে রেখে কিছুদিনের জন্য বাইরে চলে গেলেন। উদ্দেশ্য ছিল মালিকের ফিরে আসার পর দুটো প্রাণীর ব্যবহার দেখা। মালিক ফিরে আসলে দেখা গেল, কুকুর যেমন মালিকের কাছে এসে কিছুক্ষণ লাফালাফি করে নিজের আনন্দ প্রকাশ করে আবার নিজের কাজে ফিরে যাচ্ছে, বিড়ালগুলিও ঠিক তার চেয়ে বেশীই করছে। কোন কোন বিড়াল তার মনিবের বেগ চেপে বসে তার ভালবাসার বহি:প্রকাশ করছে। এরপর তারা এসে তাদের মালিকের আদর চাইছে।
পশুপাখি যেহেতু কথা বলতে পারে না সেহেতু তাদের মনোভাব বোঝার একমাত্র উপায় শারীরিক ভাষা ও অঙ্গভঙ্গি।
কুকুরের মনোভাব তার শারীরিক ভাষা দেখে সহজে আন্দাজ করা যায়। মনিবের প্রতি আর অপরিচিত কারো প্রতি তাদের শরীরী ভাষা আলাদা। কিন্তু বিড়ালের ক্ষেত্রে তার সকল অঙ্গভঙ্গিই দ্ব্যর্থবোধক। বিড়ালের লেজের নড়াচড়া, কন্ঠা থেকে বেরিয়ে আসা মৃদু গরগরানি এর দুটো অর্থই হতে পারে। বিরক্ত হলে বা আনন্দিত হলে বিড়ালের ব্যবহারের কোন তারতম্য দেখা যায় না।
আদর করার সময় বিড়াল যে গড়গড় শব্দ করে তা আনন্দ ও বিরক্তি দুটোই প্রকাশ করতে পারে।
যারা বিড়াল পুষেছেন তারা হয়ত দেখবেন বিড়ালের ভালোবাসা প্রকাশের ধরণটা আলাদা। অনেকেই বিড়ালের ভিন্ন ভিন্ন নাম দিতে পছন্দ করেন যেমন- ইগ্লু, মাইলো, পুষি, এমন অনেক ভিন্ন ভিন্ন নাম। আপনার বিড়াল সকালে আপনার পায়ে বা মুখে মৃদু আচড় কামড় দিয়ে ঘুম ভাঙাবে বা শীতের রাতে আপনার লেপের তলায় উষ্ণতার আশায় গা ঘেষে শোবে। আপনার কোলে ঘুমাবে বা কাজের সময় পায়ে গা লাগিয়ে ঘষাঘষি করবে। বাথরুমে গেলে দরজা আচড়াবে বা দড়জার সামনে বসেই থাকবে। কোন ছোট প্রাণী মারলে সেটা এনে আপনাকে উপহার দেবে। এটাই বিড়ালের ভালোবাসা প্রকাশের ধরণ।
গবেষকদের মতে, বাইরে থেকে ঘরে ফিরে যখন দেখবেন বিড়াল পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে আপনাকে দেখে যাচ্ছে তার মানে এই না যে সে আপনাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। এর মানে এই যে সে আপনাকে দেখে খুশি হয়েছে।
পোষাপ্রাণী হিসেবে বিড়ালের প্রতি সবার ভালোবাসা একটু বেশিই। এই ছোট্ট প্রাণীটি শরীরের আশপাশে থাকতেই বেশি ভালোবাসে। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে বা দূরে কোথাও কোনো স্বজনের বাড়িতে গেলে গা ঘেঁষে থাকতে অভ্যস্ত এই প্রাণীটিকে চাইলেও অনেক সময় কাছে রাখা যায় না। তবে এবার বিড়ালপ্রেমীদের জন্য এমন এক ধরনের পোশাক তৈরি করেছে জাপানের একটি কোম্পানি যার মাধ্যমে অনায়াসেই সঙ্গী করে নেয়া যাবে এই প্রাণীটিকে। পোশাকটি তৈরি করা হয়েছে বিড়ালের শরীরের অবয়বে। ওই জাম্পস্যুট পড়তে পারবেন বিড়ালের মালিক, সেই সঙ্গে এর সামনে থাকা পকেটে রাখা যাবে বিড়ালকে। প্রকৃতির ডাকে বিড়াল সাড়া দিলে জরুরি ভিত্তিতে পরিবর্তন করা যাবে পকেট। কেননা ভেতরে রাখা হয়েছে দুই স্তরের পকেট। শীতের দিনে এই পোশাক গরম রাখবে বিড়াল ও মালিককে।
ছবির মডেল-
পোষা বিড়ালের নাম- ইগ্লু, ও মাইলো
বিড়াল কোলে নিয়ে যিনি বসে আছে- আরুবা ইসলাম।