ঢাকা ০২:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
লামা ফাঁসিয়াখালীর শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসাস্থল হায়দারনাশী গ্রামার স্কুল বাগেরহাটে ঐতিহ্যকে মেলে ধরে রাখতে পিঠা উৎসব মধুপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে পিতাপুত্রের মৃত্যু মোরেলগঞ্জে জালনোট প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত মধুপুরে বিয়ের ৭ মাস পর গৃহ বধূর রহস্য জনক মৃত্যু নড়াইলের গোবরায় মৎস্য খামারে বিষ প্রয়োগ ৬ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন দুই বছর যাবত মায়ানমার কারাগারে বন্দী লামার ছেলে আবুল মোছা ইসলামপুরে মোটর সাইকেল সংঘর্ষে এক কিশোরের মৃত্যু আহত ২ সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর উত্তরার লাভলীন রেস্টুরেন্টের আগুন নিয়ন্ত্রণে এস আলম ও তার পরিবারের ১২৫ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ

সর্বগ্রাসী মাদক নির্মূলে মুল্যবোধ গঠনের পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে পারিবার

  • আপডেট সময় : ০৩:৪৭:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
  • ৩০২৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :- কৈশোরের দুরন্তপনার ছলে বাড়তি কৌতূহল, পারিবারিক অশান্তি, বেকারত্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, বন্ধুদের কুপ্রচারণা, অসৎ সঙ্গ, নানা রকম হতাশা ও আকাশ-সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাবে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার প্রবনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। যারা নেশা করে তাদের অধিকাংশই জানে যে নেশা কোনো রকম উপকারী বা ভালো কাজ নয় এবং এটা মানুষের জীবনীশক্তি বিনষ্ট করে। মাদক মানবতা ও ইমান সাথে একত্রে থাতে পারে না। পারিবারিক সামাজিক ও ধর্মীয় মুল্যবোধ এবং অনুশাসন হতে বিচ্যুতি ঘটলেই মানুষের চিন্তায় কর্মে ও মননে শূন্যতা সৃষ্টি হয়; এই শূন্যতার ঘাটতি কখনো মিটে অনিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতার অতিশয্যে আবার কভু হতাশায় ডুবে; তখনই মস্তিষ্কে বাসা বাঁধে মাদকাসক্তি।

তরুণ সমাজের বহু মেধাবী ও সম্ভাবনাময় প্রতিভা মাদকের নেশার কবলে পড়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে সামাজিক অবক্ষয়ের পথ বেছে নিচ্ছে। যেহেতু মাদকাসক্তি ও নেশাজাতীয় দ্রব্য মানবসমাজের জন্য সর্বনাশ ও চিরতরে ধ্বংস ডেকে আনে, তাই ইসলামী আদর্শে মাদকদ্রব্যকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

মাদকাসক্তদের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না, তাই যেকোনো অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে বিবেক বাধা দেয় না। মিথ্যা কথা বলা তাদের স্বাভাবিক বিষয়। কোনো ধরনের অপরাধবোধ তাদের স্পর্শ করে না; সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতির প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়ে। ভালোবাসা কিংবা স্নেহ-মমতাও তাদের স্পর্শ করতে পারে না। মাদক সেবনকারীর দেহমন, চেতনা, মনন, প্রেষণা, আবেগ, বিচারবুদ্ধি সবই মাদকের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। নেশা ও মাদকাসক্তির ভয়াবহতা থেকে মানুষকে মুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ঘোষণা করেছেন, ‘’নেশাজাতীয় যেকোনো দ্রব্যই মাদক, আর যাবতীয় মাদকই হারাম”। ‘’যেসব পানীয়তে নেশা সৃষ্টি হয় তা সবই হারাম”। ‘’মাদকদ্রব্য সব অপকর্ম ও অশ্লীলতার মূল”। নবী করিম (সাঃ) মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

মাদকাসক্তরা শুধু নিজেদের মেধা ও জীবনীশক্তিই ধ্বংস করছে তা নয়, তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলাও বিঘ্নিত করছে নানাভাবে। যেসব পরিবারের সদস্য নেশাগ্রস্ত হয়েছে, সেসব পরিবারের দুর্দশা অন্তহীন। জীবনবিধ্বংসী এ নেশার কবলে পড়ে অসংখ্য তরুণের সম্ভাবনাময় জীবন নিঃশেষিত হচ্ছে। মাদকাসক্তি আসলে নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির বিবেক-বুদ্ধি, বিচারক্ষমতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, ব্যক্তিত্ব, আদর্শ সবকিছুকে গ্রাস করে ফেলে। এসব অনিষ্টকারিতা ও অপকারিতা গুরুতর অপরাধ ও মহাপাপ। মাদকাসক্তি মানুষকে ব্যবহারিক জীবনে বিধিবদ্ধ দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত থেকে দূরে রাখে এবং অপরাধ ও পাপাচারে লিপ্ত করে।

যেহেতু মাদকাসক্তি একটি জঘন্য সামাজিক ব্যাধি, তাই জনগণের সামাজিক আন্দোলন, গণসচেতনতা ও সক্রিয় প্রতিরোধের মাধ্যমে এর প্রতিকার করা সম্ভব। যার যার ঘরে পিতা-মাতা থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাড়া, মহল্লা বা এলাকায় মাদকদ্রব্য ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ঘৃণা প্রকাশের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মাদকদ্রব্যের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে নিয়মিত সভা-সমিতি, সেমিনার, কর্মশালার আয়োজন করতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকের ভয়াবহ পরিণাম -সম্পর্কিত সতর্কতা ও শিক্ষামূলক ক্লাস নিতে হবে।

মাদক নিরাময়ে চাই পরিবারের আন্তরিকতা ও পারস্পরিক ভালোবাসা। পরিবারের পিতা-মাতাই সন্তানকে মাদকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে পারেন। পিতা-মাতারা যদি তাঁদের ব্যস্ত সময়ের একটা নির্দিষ্ট অংশ সন্তানের জন্য বরাদ্দ রাখেন, তাদের সামাজিক রীতিনীতি, বিধিবিধান ও ধর্মীয় অনুশাসন শিক্ষা দেন, তাদের সঙ্গে সদাচরণ করেন, তাদের জীবনের জটিল সমস্যাবলি সমাধানে অত্যন্ত সচেতন ও মনোযোগী হন, তাহলেই তরুনদের মধ্যে মাদকাসক্তি অনুপ্রবেশের সুযোগ থাকেনা। পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে মাদকাসক্তি বিস্তার প্রতিরোধ বহুলাংশে সম্ভব। মাদকদ্রব্য পরিত্যাগের ব্যাপারে আসক্ত ব্যক্তিদের স্বভাব বদলে আত্মপ্রত্যয়ী করে তোলার জন্য আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হওয়া দরকার। একই সঙ্গে মাদক প্রতিরোধ করতে হলে ব্যাপক গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। অভিভাবক ও মুরব্বিদের নিয়ে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মাদক প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে। মাদকাসক্তি ত্যাগে আসক্তদের উৎসাহিত ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার জন্য অনুপ্রেরণা জোগাতে হবে। সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে, তরুনদের উদ্বুদ্ধ করতে; জাতি-ধর্ম-বর্ণ দলমত-নির্বিশেষে সমাজের সকল মানুষেকে সম্পৃক্ত করে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা বাঞ্ছনীয়।

মাদক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে সাম্প্রতিক কালের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মতৎপরতা ও আন্তরিকতা সমাজের সকলের নজর কেড়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োগে বাংলাদেশ পুলিশের দৃঢ়তা সক্ষমতা ও কঠোরতা নজিরবিহীন। ইদানীং কালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে জড়িতদের আটক গ্রেফতার মাদকদ্রব্য উদ্ধার সন্তোষজনক। প্রচলিত ধ্যান ধারনার বাহিরে এসে পুলিশ বিভিন্ন শ্লোগানে মুখরিত হয়ে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা প্রতিরোধ ও আন্দোলন গড়ে তুলেছে। জন সম্পৃক্ত পুলিশিং এর মাধ্যমে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মাদক বিরোধী আন্দোলনে সমাজের সাধারণ ও প্রান্তিক মানুষদেরকে সম্পৃক্ত করতে পারলেই কেবল চুড়ান্ত সফলতা অর্জনের পথ সুগম হবে বলে প্রতীয়মান।

আমাদের ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবন থেকে মাদকদ্রব্য উৎখাত এবং মাদকাসক্তি নির্মূল করতে হলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি দরকার মানুষের বিবেক ও মূল্যবোধের জাগরণ, সচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ এবং ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন। এর জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে সচেতনতা জাগাতে হবে। প্রতিটি পরিবারপ্রধানকে সতর্ক ও সক্রিয় হতে হবে। পারিবারিক অনুশাসন, নৈতিক মূল্যবোধ ও সুস্থ ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে। পরিবারে শালীনতার সাথে খেলাধুলা শরীরচর্চা ব্যবস্থা করতে হবে। সুস্থ ধারার শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে রুচিসম্মত বিনোদনের মাধ্যমে অভিভাবকদের সাথে পরিবারের তরুন সদস্যদের মনের নৈকট্য ঘটলে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষার শক্তি সঞ্চয় করতে পারবে। মাদকের বিরুদ্ধে বর্তমান বিশ্বব্যাপী যে প্রতিরোধ আন্দোলন ও যুদ্ধ, তার সূতিকাগার হতে হবে আমাদের পরিবারগুলো।

বর্তমান প্রজন্মের অগ্রযাত্রাকে প্রাণঘাতী নেশার ভয়াবহ থাবা থেকে রক্ষার জন্য মাদকের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, এর কুফল সম্পর্কে ব্যাপকভাবে তথ্য প্রদান ও প্রচার করতে হবে। সর্বগ্রাসী মাদক যেন আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। আমরাই মাদককে নিয়ন্ত্রণ ও নির্মুল করব। খেলাধুলা, বিনোদন, সৃজনশীলতা, কল্যাণ, শান্তি ও অবারিত সৌন্দর্যের জন্য প্রস্ফুটিত হবে নির্মল নিষ্পাপ আমাদের হাসিমুখর ফুল কুড়িরা। এটাই হোক আমাদের আজকের প্রতিজ্ঞা ও মূলমন্ত্র।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

লামা ফাঁসিয়াখালীর শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসাস্থল হায়দারনাশী গ্রামার স্কুল

সর্বগ্রাসী মাদক নির্মূলে মুল্যবোধ গঠনের পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে পারিবার

আপডেট সময় : ০৩:৪৭:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক :- কৈশোরের দুরন্তপনার ছলে বাড়তি কৌতূহল, পারিবারিক অশান্তি, বেকারত্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, বন্ধুদের কুপ্রচারণা, অসৎ সঙ্গ, নানা রকম হতাশা ও আকাশ-সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাবে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার প্রবনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। যারা নেশা করে তাদের অধিকাংশই জানে যে নেশা কোনো রকম উপকারী বা ভালো কাজ নয় এবং এটা মানুষের জীবনীশক্তি বিনষ্ট করে। মাদক মানবতা ও ইমান সাথে একত্রে থাতে পারে না। পারিবারিক সামাজিক ও ধর্মীয় মুল্যবোধ এবং অনুশাসন হতে বিচ্যুতি ঘটলেই মানুষের চিন্তায় কর্মে ও মননে শূন্যতা সৃষ্টি হয়; এই শূন্যতার ঘাটতি কখনো মিটে অনিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতার অতিশয্যে আবার কভু হতাশায় ডুবে; তখনই মস্তিষ্কে বাসা বাঁধে মাদকাসক্তি।

তরুণ সমাজের বহু মেধাবী ও সম্ভাবনাময় প্রতিভা মাদকের নেশার কবলে পড়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে সামাজিক অবক্ষয়ের পথ বেছে নিচ্ছে। যেহেতু মাদকাসক্তি ও নেশাজাতীয় দ্রব্য মানবসমাজের জন্য সর্বনাশ ও চিরতরে ধ্বংস ডেকে আনে, তাই ইসলামী আদর্শে মাদকদ্রব্যকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

মাদকাসক্তদের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না, তাই যেকোনো অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে বিবেক বাধা দেয় না। মিথ্যা কথা বলা তাদের স্বাভাবিক বিষয়। কোনো ধরনের অপরাধবোধ তাদের স্পর্শ করে না; সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতির প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়ে। ভালোবাসা কিংবা স্নেহ-মমতাও তাদের স্পর্শ করতে পারে না। মাদক সেবনকারীর দেহমন, চেতনা, মনন, প্রেষণা, আবেগ, বিচারবুদ্ধি সবই মাদকের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। নেশা ও মাদকাসক্তির ভয়াবহতা থেকে মানুষকে মুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ঘোষণা করেছেন, ‘’নেশাজাতীয় যেকোনো দ্রব্যই মাদক, আর যাবতীয় মাদকই হারাম”। ‘’যেসব পানীয়তে নেশা সৃষ্টি হয় তা সবই হারাম”। ‘’মাদকদ্রব্য সব অপকর্ম ও অশ্লীলতার মূল”। নবী করিম (সাঃ) মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

মাদকাসক্তরা শুধু নিজেদের মেধা ও জীবনীশক্তিই ধ্বংস করছে তা নয়, তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলাও বিঘ্নিত করছে নানাভাবে। যেসব পরিবারের সদস্য নেশাগ্রস্ত হয়েছে, সেসব পরিবারের দুর্দশা অন্তহীন। জীবনবিধ্বংসী এ নেশার কবলে পড়ে অসংখ্য তরুণের সম্ভাবনাময় জীবন নিঃশেষিত হচ্ছে। মাদকাসক্তি আসলে নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির বিবেক-বুদ্ধি, বিচারক্ষমতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, ব্যক্তিত্ব, আদর্শ সবকিছুকে গ্রাস করে ফেলে। এসব অনিষ্টকারিতা ও অপকারিতা গুরুতর অপরাধ ও মহাপাপ। মাদকাসক্তি মানুষকে ব্যবহারিক জীবনে বিধিবদ্ধ দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত থেকে দূরে রাখে এবং অপরাধ ও পাপাচারে লিপ্ত করে।

যেহেতু মাদকাসক্তি একটি জঘন্য সামাজিক ব্যাধি, তাই জনগণের সামাজিক আন্দোলন, গণসচেতনতা ও সক্রিয় প্রতিরোধের মাধ্যমে এর প্রতিকার করা সম্ভব। যার যার ঘরে পিতা-মাতা থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাড়া, মহল্লা বা এলাকায় মাদকদ্রব্য ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ঘৃণা প্রকাশের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মাদকদ্রব্যের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে নিয়মিত সভা-সমিতি, সেমিনার, কর্মশালার আয়োজন করতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকের ভয়াবহ পরিণাম -সম্পর্কিত সতর্কতা ও শিক্ষামূলক ক্লাস নিতে হবে।

মাদক নিরাময়ে চাই পরিবারের আন্তরিকতা ও পারস্পরিক ভালোবাসা। পরিবারের পিতা-মাতাই সন্তানকে মাদকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে পারেন। পিতা-মাতারা যদি তাঁদের ব্যস্ত সময়ের একটা নির্দিষ্ট অংশ সন্তানের জন্য বরাদ্দ রাখেন, তাদের সামাজিক রীতিনীতি, বিধিবিধান ও ধর্মীয় অনুশাসন শিক্ষা দেন, তাদের সঙ্গে সদাচরণ করেন, তাদের জীবনের জটিল সমস্যাবলি সমাধানে অত্যন্ত সচেতন ও মনোযোগী হন, তাহলেই তরুনদের মধ্যে মাদকাসক্তি অনুপ্রবেশের সুযোগ থাকেনা। পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে মাদকাসক্তি বিস্তার প্রতিরোধ বহুলাংশে সম্ভব। মাদকদ্রব্য পরিত্যাগের ব্যাপারে আসক্ত ব্যক্তিদের স্বভাব বদলে আত্মপ্রত্যয়ী করে তোলার জন্য আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হওয়া দরকার। একই সঙ্গে মাদক প্রতিরোধ করতে হলে ব্যাপক গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। অভিভাবক ও মুরব্বিদের নিয়ে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মাদক প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে। মাদকাসক্তি ত্যাগে আসক্তদের উৎসাহিত ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার জন্য অনুপ্রেরণা জোগাতে হবে। সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে, তরুনদের উদ্বুদ্ধ করতে; জাতি-ধর্ম-বর্ণ দলমত-নির্বিশেষে সমাজের সকল মানুষেকে সম্পৃক্ত করে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা বাঞ্ছনীয়।

মাদক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে সাম্প্রতিক কালের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মতৎপরতা ও আন্তরিকতা সমাজের সকলের নজর কেড়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োগে বাংলাদেশ পুলিশের দৃঢ়তা সক্ষমতা ও কঠোরতা নজিরবিহীন। ইদানীং কালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে জড়িতদের আটক গ্রেফতার মাদকদ্রব্য উদ্ধার সন্তোষজনক। প্রচলিত ধ্যান ধারনার বাহিরে এসে পুলিশ বিভিন্ন শ্লোগানে মুখরিত হয়ে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা প্রতিরোধ ও আন্দোলন গড়ে তুলেছে। জন সম্পৃক্ত পুলিশিং এর মাধ্যমে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মাদক বিরোধী আন্দোলনে সমাজের সাধারণ ও প্রান্তিক মানুষদেরকে সম্পৃক্ত করতে পারলেই কেবল চুড়ান্ত সফলতা অর্জনের পথ সুগম হবে বলে প্রতীয়মান।

আমাদের ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবন থেকে মাদকদ্রব্য উৎখাত এবং মাদকাসক্তি নির্মূল করতে হলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি দরকার মানুষের বিবেক ও মূল্যবোধের জাগরণ, সচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ এবং ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন। এর জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে সচেতনতা জাগাতে হবে। প্রতিটি পরিবারপ্রধানকে সতর্ক ও সক্রিয় হতে হবে। পারিবারিক অনুশাসন, নৈতিক মূল্যবোধ ও সুস্থ ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে। পরিবারে শালীনতার সাথে খেলাধুলা শরীরচর্চা ব্যবস্থা করতে হবে। সুস্থ ধারার শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে রুচিসম্মত বিনোদনের মাধ্যমে অভিভাবকদের সাথে পরিবারের তরুন সদস্যদের মনের নৈকট্য ঘটলে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষার শক্তি সঞ্চয় করতে পারবে। মাদকের বিরুদ্ধে বর্তমান বিশ্বব্যাপী যে প্রতিরোধ আন্দোলন ও যুদ্ধ, তার সূতিকাগার হতে হবে আমাদের পরিবারগুলো।

বর্তমান প্রজন্মের অগ্রযাত্রাকে প্রাণঘাতী নেশার ভয়াবহ থাবা থেকে রক্ষার জন্য মাদকের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, এর কুফল সম্পর্কে ব্যাপকভাবে তথ্য প্রদান ও প্রচার করতে হবে। সর্বগ্রাসী মাদক যেন আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। আমরাই মাদককে নিয়ন্ত্রণ ও নির্মুল করব। খেলাধুলা, বিনোদন, সৃজনশীলতা, কল্যাণ, শান্তি ও অবারিত সৌন্দর্যের জন্য প্রস্ফুটিত হবে নির্মল নিষ্পাপ আমাদের হাসিমুখর ফুল কুড়িরা। এটাই হোক আমাদের আজকের প্রতিজ্ঞা ও মূলমন্ত্র।