নিজস্ব প্রতিবেদকঃ এবার ব্যাংক লুটেরা নজরুল ইসলাম গং এর নজর পড়েছে যমুনা ব্যাংকে। এক্ষেত্রে তাদের হয়ে কাজ করছেন খোদ ব্যাংকটির পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ। যিনি নিজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা মামলার আসামি। অথচ দেশের প্রথম সারির এই ব্যাংকটিতে সংস্কারের দোহাই দিয়ে দখলে নিয়ে লুটের চেষ্টা করছেন তিনি। ব্যাংকটির একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকখাতে একমাত্র যমুনা ব্যাংকেই প্রতিবছর পালাক্রমে চেয়ারম্যান পরিবর্তিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনের প্রেক্ষিতে গত বছর থেকে দুই বছর করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকটিতে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পরিচালকদের ঋণ দেয়া নেয়ার অনৈতিক চাপ না থাকায় ব্যাংকটি সব সূচকেই বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সংস্কারের নামে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক নূর মোহাম্মদ প্রচলিত ধারাবাহিকতা ভেঙে সময়ের আগে নিজে চেয়ারম্যান হওয়ার চেষ্টা করছেন। শুধু তাই নয়, তিনি নজরুল ইসলাম মজুমদারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার জন্য পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে অনৈতিক চাপ দিচ্ছেন।
সূত্র জানায়, নজরুল ইসলাম মজুমদার ও নূর মোহাম্মদ শেখ হাসিনা সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিতি। তাদের নেতৃত্বেই ব্যাংকখাত থেকে বিভিন্ন ইসুতে চাপ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে চাদা আদায় করা হতো। যে কারণে হাসিনা সরকারের পতনের পর ছাত্র জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ধানমন্ডি থানায় একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। ধানমন্ডি থানার মামলাটির নম্বর ৪৪৫১ (৬) ১। যেখানে মানবতা বিরোধী অপরাধের ক্ষেত্রে ফ্যাসিস্ট সরকার শেখ হাসিনার দোসর হিসেবে তার ভূমিকার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
ইতোপূর্বে নূর মোহাম্মদ দুইবার যমুনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময়ে তার বিরুদ্ধে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমে সরাসরি হস্তক্ষেপ ও স্বজনপ্রিতি অভিযোগ উঠে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনেও তা ধরা পড়ে। পরিদর্শনে প্রমাণিত হয়, ব্যাংকের স্বার্থ পরিপন্থিভাবে নিজের মেয়ে, জামাতাসহ ঘনিষ্টজনদের অতি উচ্চ বেতনের চাকরি দিয়েছিলেন।
পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুযায়ী, নূর মোহাম্মদ তার মেয়ে সাদিয়া বিনতে নূরকে যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন কমপ্লেক্সে ডাক্তার হিসেবে নিয়োগ দেন। ২০২২ – ২০২৩ অর্থ বছরে, তিনি কমপ্লেক্সের প্রশাসক এবং হেড অফ ডেন্টাল হিসেবে দুইবার বেতন গ্রহণ করেন, হিসাব নম্বর ০০১০০৩১০০২৬৯৮৫, যার মোট পরিমাণ প্রায় ৫৬ লক্ষ ৩১ হাজার টাকা। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তির কারণে ৪ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে তিনি ২৪ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা ফেরত দিতে বাধ্যহন। শুধু তাই নয়, সে সময়ে তিনি তার মেয়ের জামাতাকেও অনৈতিকভাবে কমপ্লেক্সে ডাক্তার হিসাবে নিয়োগ দেন। অথচ তিনি তখন সরকারি চাকুরিতে কর্মরত ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তি জানান, তার সময়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তিনি অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজদের ৬৫ বছরের পরেও ব্যাংকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারের মনোনীত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত মহিলাকেও যমুনা ব্যাংকে দিয়েছিলেন। চাকরি দিয়ে তাকে নিয়ে তিনি একাধিকবার বিদেশ সফরে যান। শুধু তাই নয়, ওই নারী কর্মকর্তাকে স্বল্প সময়ে পদোন্নতি ও বিভিন্ন ক্যাম্পেইনের নামে মোটা অংকের টাকা পুরস্কার দেন তিনি।
একাধিক সুত্র মতে তার সময়ে তিনি পর্ষদের কমিটির সভার নির্ধারিত সময়ের বাইরে পরিচালকদের নিয়ে অনির্ধারিত সভা আয়োজন করতেন। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাহী নিয়োগের প্রক্রিয়ায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি তার ব্যাক্তিগত সচিব কে একই বছরে দুইবার পদোন্নতি প্রদান করেন।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ ধরনের গুরুতর অভিযোগের প্রতি নজর দিতে হবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করে সুশাসনের প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দেশের জনগণের আশা ও বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করা খুবই জরুরি।
এ বিষয়ে জানতে নূর মোহাম্মদ এর সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।