মাসুদ রানা,সিনিয়র রিপোর্টারঃ রাজধানী জুড়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে চুরি ।চুরি ও ছিনতাই প্রতিরোধ করতে প্রতিনিয়ত কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।তারই ধারাবাহিকতা ডিএমপি মিরপুর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লার নির্দেশে মিরপুর মডেল থানার সুযোগ্য অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহসীন এর দুরদর্শি নেতৃত্বে চুরি ছিনতাই প্রতিরোধ করতে মিরপুর এলাকা জুড়ে সাঁড়াসি অভিযান পরিচালনা করে রাজধানীর দুর্ধর্ষ দুই গ্রিল কাটা চোরকে গ্রেফতার করছে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ।
তারা হলেন চক্রের অন্যতম মূলহোতা মোঃ জাকির হোসেন ওরফে জ্যাক (৪৪) ও মোঃ নূর জামাল ওরফে জামাল (২৬)।
মিরপুর জুড়ে দু’জন জ্যাক-জামাল নামেই পরিচিত। তারা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তালা কেটে কয়েক মিনিটের মধ্যেই দোকান সাবাড় করে চলে যায়। চুরি করা এবং চুরির মালামাল বিক্রির সুবিধার্তে পিক আপ কেনে জ্যাক এবং সেই পিক আপে ঘুরে ঘুরেই তারা চুরি করে! সাত বছরে রাজধানীজুড়ে দেড় শতাধিক চুরি করে এই জ্যাক-জামাল জুটি। আজ দুপুরে মোহাম্দপুর থানার জাফরাবাদ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে চুরির সরঞ্জাম এবং একটি পিক আপ উদ্ধার করা হয়।
দুর্ধর্ষ চুরির তদন্তে উঠে আসে দুর্ধর্ষ জ্যাক-জামাল
ছয় মাস আগে জনৈক আসাদুজ্জামান নূরের নিউ মিউজিক এশিয়া নামের এক দোকান থেকে দুর্ধর্ষ এক চুরির ঘটনা তদন্তে উঠে আসে জ্যাক- জামালের নাম। ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মিরপুর বড়বাগ পলিভিটা বেকারি এলাকায় সংঘটিত সেই চুরিতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২৩ টি মোবাইল সেট, একটি ল্যাপটপ, ২০ টি মেমোরি কার্ড, ৫০০ টি রিচার্জ কার্ড, নগদ অর্থসহ আনুমানিক এক লক্ষ ৫২ হাজার ৭৭৫ টাকার মালামাল চুরি করে জ্যাক- জামাল। দুর্ধর্ষ সেই চুরির দীর্ঘ তদন্ত শেষে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জ্যাক-জামালকে শনাক্ত করা হয় এবং আজ দুপুরে নগরীর মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোহেল (৩৫) নামের আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোহেল জ্যাক-জামালের কাছ থেকে চুরি করা মালামাল কেনে।
চুরির টাকায় পিক আপ কেনে, পিক আপে চড়েই চুরি করে!
দুর্ধর্ষ জ্যাক- জামাল সাত বছরে দেড় শতাধিক চুরি করে। এই চুরির টাকায় পিক আপ কিনে জ্যাক। চুরির টাকায় কেনা এই পিক আপে চড়েই পরে চুরি করে বেড়ায় তারা। আগে কয়েক রাতে একটি চুরি করলেও গাড়ি কেনার পর এক রাতে চারটি পর্যন্ত চুরি করে তারা! পরে এই পিক আপ করেই চুরির মালামাল বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে তারা। চুরির টাকায় চুরির জন্য তারা শুধু গাড়িই কিনেনি, আলাদা বাসাও ভাড়া করেছে! সব মালামাল এক সাথে বিক্রি করলে ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকে তাই ওই বাসাকে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করে সেখানেই চুরির মালামাল রাখত তারা।
৪ সেকেন্ডে তালা কাটে, ৪ মিনিটে চুরি করে!
জ্যাক-জামাল চুরি করতে বের হয় রাত দুই টায়। চুরি করে বাসায় ফেরে ৬ টায়। এই চার ঘণ্টার মধ্যেই তারা সব চুরি করে। দুইজনের মধ্যে জ্যাক গ্রিল ও তালা কাটে। গ্রিল কিংবা তালা কাটতে তার সময় লাগে সর্বোচ্চ চার সেকেন্ড। কাটার পর দোকানে ঢুকে মালামাল চুরি করে জামাল। তার পুরো চুরি করতে সময় লাগে মাত্র চার মিনিট! এক রাতেই তারা কয়েকটি দোকান চুরি করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, এক রাতে তারা সর্বোচ্চ চারটি পর্যন্ত চুরি করেছে।
ছোট দোকানই টার্গেট জ্যাক-জামালের
জ্যাক-জামালের মূল টার্গেট ছোট ছোট দোকান। সাধারণত রাস্তার উপর থাকা ছোট ছোট পান-সিগারেটের, মোবাইল রিচার্জের, মুদির দোকানই টার্গেট করে তারা। কারণ এসব দোকানদার সাধারণত অপেক্ষাকৃত নিম্ন আয়ের হয়। তাই চুরি করলেও তারা মামলা করেনা। এ কারণেই দেড় শতাধিক চুরি করলেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা খুবই কম। জ্যাকের বিরুদ্ধে চারটি এবং জামালের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে বলে জানান ডিএমপি মিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহসীন।