দি রেলওয়ে মেন্স স্টোরস লি: এর নির্বাচনে ১১৩ বছরের ইতিহাসে এবার প্রথম পরিচালক পদে একজন নারী প্রার্থী হয়েছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে এবং নির্বাচনে জিততে পারতে ১১৩ বছর পর নির্বাহী কমিটিতে নারীর অন্তভুক্তি ঘটতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নারীর ক্ষমতায়ণ সর্বত্র চোখে পড়ার মতো থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানে এর আগে কোন নারী প্রার্থী ছিলনা। এবার প্রথম নারী প্রার্থী থাকায় এটিকে পজেটিভলি দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। ভোটারদের মাঝেও এবার আলাদা একটা আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেকে।
‘প্রথম নারী ‘ প্রার্থী হিসেবে মিসেস মনোয়ারা বেগম’ সমর্থকদের সাথে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৯ মে) ‘দি রেলওয়ে মেন্স স্টোরস লি: এর ১১১ তম বার্ষিক সাধারণ সভা ও পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্বিতা করার জন্য পরিচালক পদে মনোনয়ন পত্র দাখিল করছেন। মঙ্গলবার (১২ মে) তার জন্য কলম প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবারের নির্বাচনে অফিসার কোটায় একজনমাত্র প্রার্থী থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) মো. সাইফুল ইসলাম। পরিচালক পদে মো. শাহীদ হোসেন (চেয়ার), মো. মাসুদুর রহমান (আম), শ্যামল চন্দ্র দাশ (আনারস), মো. রাশেদুল ইসলাম মিথুন (ঘড়ি) ও মো. রাইসুল ইসলাম বই প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এই ৬ জনের মধ্য থেকে ২ জন পরিচালক সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন।
বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশের নারীরাও যেতে পারেন অনেকদুর। যুগে যুগে মহিয়সি নারীরা এর প্রমাণ দিয়েছেন। তাই বাংলার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার নারী কবিতায় লিখে গেছেন, ” বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর” পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে সমানতালে। আবার একই নারী দায়িত্ব ও মমতার চাদরে যেমন ঢেকে রেখেছে পরিবার সেই একই নারী নিয়ন্ত্রণ করছে কর্পোরেট ব্যবসা বাণিজ্যও। শুধু তাই নয় নারীর ক্ষমতায়ণকে আরো শক্তিশালী করতে সরকার নানা পরিকল্পনা নিয়েছে। জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ওয়ার্ড থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত পর্যন্ত নারীদের জন্য রাখা হয়েছে সংরক্ষিত পদ। সাংগঠনিক কমিটি কাঠামোতে রাখা হয়েছে নারীর জন্য সংরক্ষিত পদ। আবার কোন নারী ইচ্ছে করলে সাধারণ পদে আসতে পারেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্বিতাও করতে পারেন। তবে এই প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত পদ না থাকলেও নির্বাচনে অংশ নিতে কোন বাঁধা নেই বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র নিশ্চিত করেছে।
এব্যপারে অফিসার কোটায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চট্টগ্রামের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ১১৩ বছরের ইতিহাসে রেলওয়ে মেন্স স্টোওে এবার একজন নারী পরিচালক পদে প্রার্থী হয়েছে জেনে ভালো লাগছে। আমরা চাই পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও নেতৃত্বে আসুক।
এব্যপারে দি রেলওয়ে মেন্স স্টোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সেয়দ সাহাবুদ্দিন শামীম বলেন, নারীর ক্ষমতায়নকে সর্বত্রই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের উদবুদ্ধ করছেন। আমরাও নারীর ক্ষমতায়নকে স্বাগত জানাই। তিনি নির্বাচিত হলে মেন্স স্টোরে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে। এই তিনি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন বলে আশা করছি।
নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে ১১৩ বছরের ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র নারী প্রার্থী মনোয়ারা বেগম বলেন, আমি আমার পরিবার ও অফিস সামলাচ্ছি। কোথাও কোন সমস্যা হচ্ছেনা। আমার পরিবার ও কলিকদের কাছ থেকে ভালো সাপোর্ট পাচ্ছি। নির্বাচনের প্রচারণা চালাতে গিয়ে ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। যদি নির্বাচিত হই তাহলে আমার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করব। ভোটাররা যে বিশ্বাস ও সম্মান দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করবেন আমি তাদের আকাংখা পুরণে নীতিতে অবিচল থেকে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করব।
উল্লেখ্য আগামী ২৪ মে বেলা ১১ টা থেকে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম পুরাতন প্রতিষ্ঠান ১১৩ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘দি রেলওয়ে মেন্স স্টোরস লি: ‘ (যা রেলওয়ে কোঅপারেটিভ স্টোর নামে চট্টগ্রামে বহুল পরিচিত) এর ১১১ তম বার্ষিক সাধারণ সভা ও পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন। কোম্পানি আইনে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার হোল্ডারগন ভোটের মাধ্যমে পরিচালক নির্বাচন করেন। সারাদেশে বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত সর্বস্তরের অন্তত ৭ হাজার রেলওয়ে কর্মকর্তা কর্মচারী শেয়ার হোল্ডার আছেন। গত বছরের নির্বাচনে ভোটার ছিল ৪১২৮ জন। এবার ভোটে কারচুপি ঠেকাতে ডাটা কালেকশন করা হয়েছে ২৪০০ জন। তবে রেলে কর্মরত আছে ১৮০০।
বিস্তৃর্ণ এলাকায় ভোটারদের অবস্থান,বিশাল বড় নির্বাচনী এলাকা, রেলের চাকুরিতে সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন পদধারী অনেক ভোটার, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকা ইত্যাদি সম্ভাব্য কারনেই হয়তো এর আগে এ প্রতিষ্ঠানে কোনো নারী প্রার্থী পাওয়া যায়নি।
সকল ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ, প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে বর্তমান বিশ্বে রাষ্ট্র সমুহের অন্যতম অগ্রাধিকার। নি:সন্দেহে নারীর ক্ষমতায়নের পথে একটি ইতিবাচক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।