নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সাম্প্রতিক সময়ে মুন্সীগঞ্জের কোর্টগাঁও এলাকায় বন্ধুর বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ০৪ জানুয়ারি ২৩ ইং স্কুলছাত্রী জেসিকা হত্যার প্রতিবাদে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্বজনরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তারাই ফলশ্রতিতে র্যাব-৩
উক্ত ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্রী জেসিকা মাহমুদ জেসি হত্যার আসামি বিজয় রহমান (১৯), পিতা-আরিফুজ্জামান আরিফ, সদর, মুন্সীগঞ্জ’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত বিজয় বর্ণিত হত্যাকান্ডের ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
দুপুরে কাওরানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গনমাধ্যম শাখার পরিচালন কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের জানান গ্রেফতারকৃত বিজয় ২০১৯ সালে একই স্কুলে
পড়–য়া অপর আসামি আদিবা আক্তার এর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। আদিবা আক্তার এর সাথে সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে গ্রেফতারকৃত বিজয় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ভিকটিম জেসিকার সাথেও প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। গ্রেফতারকৃত বিজয় উভয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক বজায় রেখে ২০২২ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে অপর আসামি আদিবার সাথে গোপনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত বিজয় এবং অপর আসামি আদিবার গোপনে বিয়ের বিষয়টি ভিকটিম জেসিকা মাহমুদ জেসি জানতে পারে এবং গ্রেফতারকৃত বিজয়ের সাথে তার বিভিন্ন কথোপকথনের স্ক্রীনশর্ট মামলার অপর আসামি আদিবার মেসেঞ্জারে পাঠায়। বিষয়টি নিয়ে গ্রেফতারকৃত বিজয় ও অপর আসামি আদিবার মাঝে বিভিন্ন সময় কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া-বিবাদ হলে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়।
২০২৩ সালে উভয়ে মিলে ভিকটিম জেসিকা মাহমুদ জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে ডেকে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করে। পূর্ব-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দিন বিকেলে অপর আসামি আদিবা ভিকটিম জেসির সাথে দেখা করলে ভিকটিম বিজয়ের সাথে তার বিভিন্ন সময়ের কথোপকথোনের স্ক্রীনশর্ট দেখায় এবং এই সমস্যা মিমাংসা করার জন্য মামলার অপর আসামি আদিবা ভিকটিম জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে আদিবা ফোন করে গ্রেফতারকৃত বিজয়কে ছাদে আসতে বলে। অতঃপর সেখানে তাদের মধ্যে বাগবিতন্ডা ও হাতাহাতির একপর্যায়ে গ্রেফতারকৃত বিজয় ও অপর আসামি আদিবা ভিকটিম জেসির গলাটিপে ধরলে শ্বাষরোধ হয়ে ভিকটিম অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
একপর্যায়ে গ্রেফতারকৃত বিজয় এবং তার বাবাসহ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ভিকটিমকে মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত বিজয় ভিকটিম জেসির ভাইকে জেসির অসুস্থতার কথা বলে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে জরুরী ভিত্তিতে আসতে বলে। জেসির ভাই হাসপাতালে এসে পৌঁছালে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান জেসি মৃত্যুবরণ করেছে।
উক্ত মৃত্যুর ঘটনা শুনে গ্রেফতারকৃত বিজয় এবং মামলার অপর আসামি আদিবা কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ভিকটিম জেসির লাশ ময়নাতদন্ত শেষে জেসির ভাই জানতে পারে জেসিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে জেসির ভাই মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর থানায় গ্রেফতারকৃত বিজয় ও তার অপর আসামি আদিবাসহ আরও ১-২ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা রুজুর পর ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ উক্ত হত্যার অন্যতম সহযোগী আদিবা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয় এবং সে বর্তমানে জেল-হাজতে রয়েছে।
ভিকটিম জেসির পরিবারের সদস্যদের নিকট হতে জানা যায় যে, ভিকটিম জেসিকা মাহমুদ জেসি (১৬), পিতা-সেলিম দেওয়ান, সদর, মুন্সীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিল। গত ০৩ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ আনুমানিক ৪. ঘটিকার সময় অপর আসামি আদিবা ভিকটিম জেসিকার বাসায় গিয়ে জেসিকাকে বিজয়ের বাসার ছাদে নিয়ে যায়। একই তারিখ ৬.ঘটিকার সময় বিজয় জেসিকার ভাইকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জেসিকার অসুস্থতার কথা বলে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আসার জন্য বলে। পরবর্তীতে জেসির পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে গিয়ে জেসিকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়।
বিজয় মুন্সীগঞ্জের একটি কলেজ থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সে জেসি হত্যার পর থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকায় তার বন্ধুর বাড়িতে ০৪ দিন আত্মগোপনে থাকে।
সেখানে সে নিজেকে নিরাপদ মনে না করে পরবর্তীতে ফরিদপুরের একটি মাজারে ছদ্মবেশে ২২ দিন আত্মগোপনে থাকে। একপর্যায়ে তার সন্দেহ জাগে যে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতারের লক্ষে এখানে অভিযান চালাতে পারে। সেই আশংকা থেকে সে ০১ ফেব্রæয়ারি ২০২৩ তারিখে রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাসায় এসে আত্মগোপনে থাকে। গত রাতে রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় আত্মগোপনে থাকাকালীন র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৩এর যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়।গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
চেয়ারম্যানঃ-আব্দুর রহিম খান,
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো : মাসুদ রানা
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ঢাকার বার্তা ২৪