ব্যবহার সুন্দর হলে তার মন উদার ও মানবিক গুণাবলিতে ভরপুর হয়ে ওঠে। ভদ্র ও সংযমী আচরণের মাধ্যমে গড়ে ওঠে সুন্দর ব্যবহার। কারও মধ্যে এসব গুণের সমাহার থাকলে তা ধীরে ধীরে মানুষের ব্যবহারকে সুন্দর ও শোভন করে গড়ে তোলে। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সে একাকী জীবন যাপন করতে পারে না। নানা কারণে তাকে অন্যের সাথে মিলে মিশে বসবাস করতে হয়। তাই সমাজে মানুষের একটি ভালো কথা যেমন একজনের মন জয় করে নিতে পারে, তেমনি একটু খারাপ বা অশোভন আচরণ মানুষের মনে কষ্ট দিতে পারে। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে আমাদের উচিত সর্বদায় মানুষের সাথে ভালো ও সুন্দরভাবে কথা বলা। অকারণে যাতে কোন মানুষ কথার কারণে কষ্ট না পায় সেটা খেয়াল রাখা।
সুন্দর আচরণ ও সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করে পরকালে জান্নাতে যাওয়া যাবে। এ বিষয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মুমিনের আমলনামায় সুন্দর আচরণের চেয়ে অধিক ভারী আমল আর কিছুই হবে না। যে ব্যক্তি অশ্লীল ও কটু কথা বলে বা অশোভন আচরণ করে, তাকে আল্লাহতায়ালা ঘৃণা করেন। আর যার ব্যবহার সুন্দর, সে তার ব্যবহারের কারণে নফল রোজা ও তাহাজ্জুদের সওয়াব লাভ করবে।’ -সুনানে তিরমিজি।
বলতে গেলে আমরা ঘরে বাইরে, অফিস আদালতে চলাফেড়ায় যে ব্যাপারটা চোখে পড়ে এবং মনের মধ্যে দাগ কাটে তা হলো মানুষের ব্যবহার। একজন মানুষ তার ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে জীবনের সর্বক্ষেত্রে সফল হতে পারে। আমরা যতই পড়াশোনা করি, বিদ্যার্জন করে জ্ঞান-বিজ্ঞানে দক্ষ হই না কেন, ভাল ব্যবহার না থাকলে মানুষের কাছে ভালো মানুষ হয়ে উঠা কষ্টকর । সব মানুষেরই নিজের ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করার জন্য তার ব্যবহারকে অমায়িক করে গড়ে তোলা দরকার। কেননা আচার-ব্যবহারের মধ্য দিয়েই মনুষ্যত্বের প্রকৃত পরিচয় ফুটে ওঠে।
মানুষ ভালো কথাবার্তা ও আচার-ব্যবহার গঠনের মাধ্যমে নিজেকে শোভন, সুন্দর আর পরিশীলিত করে অন্যের প্রতিভাজন হয়ে উঠতে পারে। সবার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়ে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকটতম প্রতিবেশী, দূরবর্তী প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে।’ (সূরা আন নিসা-৩৬)।
তাই আমাদের সবসময় সচেতন থাকা উচিত, যাতে আমাদের আচরণে কেউ বিন্দুমাত্র কষ্ট না পায়। যার আচরণ যত বেশি সুন্দর সবাই তাকে তত বেশি ভালোবাসে, সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। যার আচরণ ভালো নয় সবাই তাকে ঘৃণা করে ও এড়িয়ে চলে। সুন্দর ব্যবহার সুন্দরভাবে কথা বলা সুন্দর মনের পরিচয় বহন করে। সমাজকে এমন আলোকিতভাবে গড়ে তোলা দরকার, যাতে সহজেই সব মানুষ ব্যক্তিগতভাবে সদ্বব্যবহার করার সুযোগ পায়। সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন করে মানবজীবনকে সুখী, সমৃদ্ধ ও পরিপূর্ণ করার পাশাপাশি চিরন্তন জীবনের মহাশান্তি লাভের পথ সুগম করা সম্ভব।
লেখক :মো: জাহাঙ্গীর আলম
ব্যুরো চীফ চট্টগ্রাম
দৈনিক আজকের বিজনেস বাংলাদেশ
সাধারণ সম্পাদক
রেলওয়ে জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন।
বিশিষ্ট কলামিষ্ট,সংগঠক ও সংবাদকর্মি।