মেহেরপুর প্রতিনিধিঃসুখ সাগর পেঁয়াজে আর সুখের সন্ধান পাচ্ছেন না মেহেরপুরের পেঁয়াজ চাষীরা।পেঁয়াজের বীজ, রোপণ, সার, সেচ, কীটনাশকসহ উৎপাদন থেকে ওঠানো পর্যন্ত প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকা। কিন্তু পেঁয়াজের বাজার মূল্য কম হওয়ায় তা বিক্রি করে দাম পাচ্ছেন প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এতে করে প্রতি বিঘা জমিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা।
মেহেরপুর সদর, মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলা মিলে জেলায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিকটন পেয়াজ উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন কৃষি সম্প্রসাণ অধিদপ্তর, মেহেরপুর। কিন্তু বাজার মূল্য কম হওয়ায় হতাশায় নিমজ্জিত কৃষকরা।
প্রায় দেড় যুগ ধরে পেঁয়াজের চাষ করে আসছেন মেহেরপুরের কৃষকরা। তবে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের চাষ লক্ষ্য করা যায়, জেলার শিবপুর, বিশ্বনাথপুর, ভবের পাড়া, সোনাপুর, আশরাফপুর, নাজিরকোনা, টেংরামারী, আনন্দবাস, জয়পুর, তারানগর ও ভবানীপুর এলাকায়। অন্যান্য বছরে লাভের মুখ দেখলেও এবার মুখের হাসি মলিন হয়ে গেছে তাদের। কৃষকরা বলছেন, সুখ সাগর পেঁয়াজে আর সুখ মিলছেনা।
গত কয়েকদিনে সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে আলাপকালে তিনারা জানান, জমি থেকে প্রতি মণ পেঁয়াজ প্রথমে ৪’শ ৫০ টাকা পরে ৫’শ টাকা হলেও এখন তা ৫’শ ৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
আশরাফপুর গ্রামের আব্দুর রহমান জানান, গত ২০ বছর ধরে পেঁয়াজের চাষ করে আসছি। ৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষে খরচ করেছি প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা কিন্তু বিক্রি করে খরচের টাকায় ওঠেনি। প্রায় দেড় লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এতে আমি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেছি।
গাংনী কাঁচা বাজারের নূর ভান্ডারের ম্যানেজার মামুন জানান, সুখ সাগর পেঁয়াজ ১৩/১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং স্থানীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২/২৩ টাকায়।
মেহেরপুর তহবাজারের মহলদার ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী নাসির উদ্দীন জানান, প্রতি মণ সুখ সাগর ৫’শ/৫’শ ৫০ টাকায় কেনা-বেচা চলছে। পেঁয়াজের মূল্য কমের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ঢাকার বাজারে সুখ সাগর পেঁয়াজের চাহিদা কম। মেহেরপুরে প্রচুর সুখ সাগর উৎপাদন হওয়ায় তা শুধুমাত্র চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও বরগুনাতে বিক্রি করা হচ্ছে। যা সেসব এলাকায় চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। তাছাড়া সুখ সাগর পেঁয়াজ মিষ্টি হওয়ায় শুধুমাত্র হোটেল ও বাসায় সালাত তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও ফরিদপুর ও পাবনা এলাকার পেঁয়াজও উঠে গেছে। যে কারণে চাহিদা কম হওয়ায় মূল্যও কমে যাচ্ছে।
পেঁয়াজ চাষীরা জানান, ক’দিন পরেই মাহে রমজান। রমজানে পেঁয়াজের প্রচুর চাহিদা থাকে। সুতরাং রমজানকে কেন্দ্র করে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না করা হলে চাষীরা হয়তো তাদের পেঁয়াজে কাংখিত মূল্য পেতে পারে। অন্যথায় পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারাবে মেহেরপুরের কৃষকরা।
মাজিদ আল মামুন
মেহেরপুর প্রতিনিধি
০১৯১৫৩৫১৪৯৮