নিজস্ব প্রতিবেদক:- সরকারি কর্মকর্তা সেজে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেছেন ছানোয়ার হোসেন ওরফে খান ছানা। কখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক আবার কখনো দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক পরিচয় দিয়ে তিনি চাকরি প্রত্যাশীদের সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে প্রথম দফা টাকা নিয়ে জাল নিয়োগপত্র দিয়ে বাকি টাকা নিয়ে ভুয়া পরিচয়পত্রও সরবরাহ করে অভিনব কায়দায় ছানোয়ার হোসেনের প্রতারণার খবর মিলেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতারক চক্রের প্রধান ছানোয়ার হোসেন মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার ঘোনাপাড়া গ্রামের ওয়াজউদ্দিন খান এর ছেলে। তিনি নিজের নাম ঠিকানা ও বাবা-মা'র নাম পরিবর্তন করে একাধিক পরিচয়ে জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট তৈরি করে দীর্ঘবছর যাবত প্রতারণার মাধ্যমে সহজ-সরল মানুষদের সর্বস্ব হাতিয়ে নিচ্ছেন।
সর্বশেষ সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কম্পিউটার অপারেটর পদে ৭ জন, অফিস সহায়ক পদে ১০ জন ও পিয়ন পদে ১৫ জনসহ মোট ৩৯ জনকে সরকারী চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র ও আইডি কার্ড দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ৩ কোটি টাকার উপরে হাতিয়ে নেন তিনি।
বাংলাদেশ সচিবালয়ের সামনে প্রধান ফটকে দাড়িয়ে এসব চাকরি প্রত্যাশীদেরকে ভুয়া নিয়োগপত্র এবং পরিচয়পত্র সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি নিয়োগ প্রত্যাশীদের কাছ থেকে কৌশলে পদভেদে ২০ লাখ, ১৮ লাখ, ১৫ লাখ টাকা করে নিয়েছেন ছানোয়ার হোসেন ওরফে খান ছানা।
ছানার প্রতারণার শিকার কয়েকজন নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, তারা গ্রাম-মফস্বলের বাসিন্দা। সোনার হরিণ সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছেন ভেবে তারা ধার-দেনা করে, জমিজমা, গরু-বাছুর, কেউ কেউ স্বর্ণালংকার বিক্রি ও বন্ধক রেখে সুদের উপর টাকা জোগাড় করে ছানোয়ার হোসেন ওরফে খান ছানার হাতে তুলে দেন।পরে তারা জানতে পারেন এসব নিয়োগপত্র ও আইডি কার্ড জাল, সেগুলো জালিয়াতি করে তৈরি করে তাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। সর্বস্বান্ত হয়ে তারা এখন পথে পথে ঘুরছেন।
ভুক্তভোগীরা আরো জানান, 'খান ছানার সাথে যোগাযোগ করতে মুঠোফোনে দিনের পর দিন-রাত কল করলে প্রথমে রিসিভ টাকা ফেরত দেবে বলে। এরপর নানা তাল-বাহানা করে ফোন রেখে দেয়। পরবর্তীতে ফোন করলে নানা হুমকি দেয় ও বিভিন্ন রকম গালমন্দ করে। এরপর থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ ফোন রিসিভ না করায় আমরা সকলে এখন চরম হতাশাগ্রস্ত।'
খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বেরিয়ে পড়ে আরো প্রতারণার তথ্য। চাকরির প্রতারণার পাশাপাশি ছানোয়ার হোসেন ওরফে খান ছানা বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের সরকারি-বেসরকারি কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দিয়েও প্রতারণা করেছেন বলে জানা যায়।
ভুক্তভোগী একজন জানান,
'ছানোয়ার হোসেন ওরফে খান ছানা প্রতারক হলেও তার বেশভূষা দেখে মনে হয়েছে, সে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। সে সচিবালয়ের ভেতর থেকে এসে গেটে আমার সাথে সাক্ষাত করায় আমরা তাকে বিশ্বাস করি, যখন বুঝতে পারি সে প্রতারক তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। অনেক কষ্টে যোগাড় করা টাকা ও সহায়-সম্বল হারিয়ে আমরা অনেক গরিব ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের বেকার যুবক এখন তার সন্ধানে, টাকা আর বিচারের আশায় পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছি। প্রশাসনের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আটক করে প্রতারক ছানোয়ার হোসেন ওরফে খান ছানার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও আমাদের অর্থ ফেরত দেওয়ার দাবি জানাই।
চেয়ারম্যানঃ-আব্দুর রহিম খান,
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো : মাসুদ রানা
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ঢাকার বার্তা ২৪