জসীম উদ্দিনঃ সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাংলাদেশের সাইবার স্পেসে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ উদঘাটনপূর্বক নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধ ও আইনের আওতার আনার জন্য সাইবার সংক্রান্ত মামলা তদন্ত এবং অভিযান পরিচালনা করে থাকে। উক্ত সেল সিপিসির ফেসবুক পেইজ, হটলাইন নম্বর ও ইমেইলের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে সাইবার সংক্রান্ত যে কোন অভিযোগ গ্রহণ পূর্বক অভিযান পরিচালনা করে থাকে।
এরই ধারাবাহিকতায় সিআইডি’র প্রধান অ্যাডিশনাল ইন্সপেক্টর জেনারেল মোহাম্মদ আলী মিয়া বিপিএম,পিপিএম এর নির্দেশনায় বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, পিপিএম এর তত্বাবধানে একটি চৌকস দল অদ্য ১৪ মার্চ ২০২৪ ইং দিবাগত রাতে প্রতারক চক্রের মূল হোতা সোহেল আহমেদ অপু (২৮)কে পাইকপাড়া, মিরপুর, ঢাকা হতে গ্রেফতার করে।
দুপুরে সিআইডির প্রধান কার্যালয় মালিবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া বিপিএম পিপিএম, এডিশনাল আইজিপি সাংবাদিকদের জানান,
ভিকটিম সুমন আল রেজা (৪০) এর সাথে প্রতারক চক্রের ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে প্রতারক চক্রের একজন সদস্য নিজেকে ফ্লোরিডা সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন যে, ফ্লোরিডা সিটি ব্যাংকের একজন ক্লাইন্টের ৬০ লক্ষ ডলার ডিপোজিট রয়েছে। ক্লাইন্টটি হাইতিতে গত ১২ জানুয়ারি ২০১০ খ্রিঃ মৃত্যুবরণ করে এবং তার কোন ওয়ারিশ নেই।
এরপর প্রতারক সুমন আল রেজা’কে উক্ত ব্যাংক ক্লায়েন্টের ওয়ারিশ হওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে এবং ডিপোজিটকৃত টাকা উত্তোলনের পর দুজনে সমানভাগে ভাগ করে নেয়ার প্রস্তাব দেয়। পরবর্তীতে প্রতারক চক্রটি সুমন আল রেজার নিকট লাগেজ ভর্তি ডলার কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রেরণের চার্জ বাবদ ৯,৭০,০০০/- টাকা দাবি করে। সেই টাকা প্রদান করার পর প্রতারক চক্রটি ফেডারেল ট্যাক্স হিসাবে ৫৫ হাজার ডলার (৬১লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা ) দাবি করে। সুমন আল রেজা লাগেজ ভর্তি ডলারের প্রলোভনে পড়ে প্রতারক চক্রের কথা মতো বাংলাদেশ ফেডারেল ট্যাক্স হিসাবে ৫৫ হাজার ডলার (৬১লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা ) গোল্ডেন লজিস্টিক এন্টারপ্রাইজের একাউন্ট নং-১৬৪১১০০০৬৬৮৯৬ ডাচ বাংলা ব্যাংক মিরপুর-১০ শাখা, ঢাকাতে পাঠিয়ে দেয়। শর্তমোতাবেক পার্সেল না পাওয়ায় সুমন আল রেজা বুঝতে পারেন যে, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন এবং এই সংক্রান্তে উত্তরা পশ্চিম থানার মামলা নং- ২১ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ধারা ৪২০/৪০৬ পেনাল কোড রুজু করেন।
তিনি আরো বলেন মামলাটির তদন্তভার সিআইডি গ্রহণ করার পর ব্যাংক একাউন্ট হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে গত ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ইং মোঃ আকাশ (২৩)’কে গ্রেফতার করে। এরপর তার দেওয়া তথ্য মতে প্রতারণকারী চক্রের আরেক সদস্য মাঃ ইব্রাহিম (৩০)’কে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে জেল হাজতে প্রেরণ করলে তাদের স্বীকারোক্তি অনুসারে প্রতারণাকারী চক্রর মূল হোতা অপুর নাম উঠে আসে। এর প্রেক্ষিতে তাকে অদ্য ১৪ মার্চ ২০২৪ তারিখ দিবাগত রাতে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথামিক তদন্তে জানা যায় চক্রটি বিভিন্ন ভিকটিমদের নিকট থেকে প্রায় ২,৩০,১৮,৩২৬ (দুই কোটি ত্রিশ লক্ষ আঠার হাজার তিনশত ছাব্বিশ) টাকা প্রতারণা করে ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে।তিনি আরো বলেন “ভার্চুয়াল টোপ থেকে সাবধান”।আপনার মূল্যবান অর্থ প্রতারকদের দিয়ে সর্বস্ব হারাবেন না।সাইবার ওয়ার্ল্ডে অপরিচিত নতুন বন্ধুদের কাছ থেকে নগদ টাকা/ মূল্যবান গিফট নেয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করুন এবং প্রতারিত হওয়া থেকে বাচুঁন”।