র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতার ও বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর অপরাধে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগনের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও লাইসেন্স বিহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিক, অবৈধ মজুদদার, কিশোরগ্যাং, ভেজাল খাদ্যদ্রব্য ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে জনগনের আস্থা অর্জন করেছে।
১১ মার্চ সোমবার র্যাব-৩ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, রাজাধানীর বিভিন্ন এলাকায় লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনার মাধ্যমে রুগীদের সাথে প্রতারনা করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে ও ভুল চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে নানাভাবে রুগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের নানা দুর্ভোগে ফেলছে। সাধারণত রাজধানীর বিভিন্ন নামকরা সরকারী হাসপাতালের দালালদের মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনেরা এসকল হাসপাতালে চিকিৎসা ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে এসে প্রতারিত হয়। এসকল অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহ সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালিত না হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিম্নমানের অবকাঠামোগত সুবিধা প্রদান করে অদক্ষ চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান, নার্স ও আয়াদের দ্বারা ভুল চিকিৎসা প্রদান করে রোগীদের নানা ধরনের ঝুকির দিকে ঠেলে দেয়। এসকল হাসপাতালের পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামাদি এবং নমুনা সমূহ ঝুকিপূর্ণ পরিবেশে সংরক্ষিত হয় যাতে এর কার্যকারিতা বিনষ্ট হয়। উদাহরণস্বরূপঃ এক্সরে মেশিন এমন জায়গায় রাখা হয় যেখানে ন্যূনতম সুরক্ষা-ব্যবস্থা নেই৷
এতে এক্সরে করতে আসা রোগী, যিনি এক্সরে করাচ্ছেন তিনি এবং আশপাশের মানুষ ভয়াবহ রেডিয়েশনের শিকার হচ্ছেন৷ রি-এজেন্ট অর্থাৎ কেমিক্যালের পাশে রাখা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় জিনিস। অনুমোদন বিহীন এসকল অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অধিকাংশ চিকিৎসকই অদক্ষ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই পরীক্ষা-নিরীক্ষাকারী টেকনিশিয়ানদের নিয়োগ প্রদান করা হয়। এছাড়াও ভুয়া চিকিৎসক, অনভিজ্ঞ নার্স ও অদক্ষ আয়া দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম৷ অর্থাৎ চিকিৎসার নামে মরণ ব্যবস্থা চালু করে রেখেছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৩ এর আভিযানিক দল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ১১ মার্চ ২০২৪ তারিখ ১১ ঘটিকা হতে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে ‘সীমান্তিক ক্লিনিক’ এর মালিক মোঃ সামসুদ্দীন (৬২)খিলগাঁও, ঢাকা এর নিকট হতে ৩ লক্ষ ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় এবং ল্যাব টেকনিশিয়ান মাহবুব আলম (৫২)গাজীপুর এর কোন প্রকার শিক্ষাগত সনদ না থাকায় ৭ দিনের কারাদন্ড প্রদান করেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল: পরিবেশ ও নার্কোটিক্স ছাড়পত্র না থাকা, ঔষধ রাখার স্টোর নোংরা, ওটি ও এক্সরে রুম অস্বাস্থ্যকর হওয়া, ডিউটি ডাক্তার ১৫ জনের স্থলে ১০ জন থাকা, নার্স ৩০ জনের স্থলে ১২ জন থাকা, ফায়ার লাইসেন্স না থাকা প্রভৃতি অনিয়ম।
একই সময়ে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে ‘পিপলস্ হসপিটাল’ এর মালিক মোঃ মনোয়ারুল হক (৩৫), খিলগাঁও, ঢাকা এর নিকট হতে ৪ লক্ষ ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।যার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের লাইসেন্স এর মেয়াদ না থাকা, ব্লাড ব্যাংক এর লাইসেন্স না থাকা, পরিবেশ ও নার্কোটিক্স ছাড়পত্র না থাকা, ওটি ও এক্সরে রুম অস্বাস্থ্যকর হওয়া, অপ্রতুল ডাক্তার ও নার্স থাকা প্রভৃতি অনিয়ম।
পরবর্তীতে রাজধানীর মুগদা এলাকায় ৪ ঘটিকায় অভিযান পরিচালনা করে ‘ফ্রেন্ডস কেয়ার হাসপাতালে’ বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে হাসপাতালের মালিক ১। শফিকুর রহমান এবং ২। সাকুর আহমেদ এর নিকট হতে ৫ লক্ষ ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল: হাসপাতালের মেয়াদত্তীর্ণ লাইসেন্স, পরিবেশ ও নার্কোটিক্স ছাড়পত্র না থাকা, ওটি ও এক্সরে রুম ময়লাযুক্ত প্রভৃতি অনিয়ম।
একই সময় রাজধানীর মুগদা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ‘সুরাইয়া হাসপাতালে’ বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে হাসপাতালের মালিক ১। মোঃ সিরাজুল ইসলাম এর নিকট হতে ২ লক্ষ ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। মোট জরিমানা আদায় ১৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।এসকল অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে র্যাব-৩ এর অভিযান অব্যহত থাকবে।