ঢাকা ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
লামা ফাঁসিয়াখালীর শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসাস্থল হায়দারনাশী গ্রামার স্কুল বাগেরহাটে ঐতিহ্যকে মেলে ধরে রাখতে পিঠা উৎসব মধুপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে পিতাপুত্রের মৃত্যু মোরেলগঞ্জে জালনোট প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত মধুপুরে বিয়ের ৭ মাস পর গৃহ বধূর রহস্য জনক মৃত্যু নড়াইলের গোবরায় মৎস্য খামারে বিষ প্রয়োগ ৬ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন দুই বছর যাবত মায়ানমার কারাগারে বন্দী লামার ছেলে আবুল মোছা ইসলামপুরে মোটর সাইকেল সংঘর্ষে এক কিশোরের মৃত্যু আহত ২ সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর উত্তরার লাভলীন রেস্টুরেন্টের আগুন নিয়ন্ত্রণে এস আলম ও তার পরিবারের ১২৫ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ

রাজধানীতে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তিন নারী বাস কন্ডাক্টর!

  • আপডেট সময় : ০৪:৩৫:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
  • ৩০৭৬ বার পড়া হয়েছে

খান মেহেদী :- প্রবল ইচ্ছা ও সাহস থাকলে যে সব অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়, তা দেখিয়েছেন সোমা, নাজমা ও হনুফা। কথায় আছে, যে নারী রাঁধে সে চুলও বাঁধে। আজ কোথাও থেমে নেই নারীরা। ঘরে কিংবা বাইরে পুরুষের পাশাপাশি সব জায়গায়ই নারীর অবস্থান; যারা স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছেন জীবন সংগ্রামের অকল্পনীয় চ্যালেঞ্জ। যাদের নিয়ে গর্ব করে তাদের আশপাশের মানুষ।

সোমা আক্তার। ১৮ বছর ধরে করছেন বাসের কন্ডাক্টারি। সকাল-সন্ধ্যা তার সময় কাটে যাত্রীসেবা দিতে। ডিউটি করেন রাজধানীতে নারীদের জন্য বিআরটিসির বিশেষ বাস সার্ভিসে।

একইসঙ্গে ঘর এবং চাকরি দুটোই সামলাচ্ছেন তিনি। সকালে ঘুম থেকে উঠে সংসারের কাজ সেরে চলে আসেন ডিউটিতে। বাস ধোয়া-মোছা থেকে শুরু করে যাত্রী ওঠানো-নামানো সব কাজই তার।

সোমা যেমন খুশি তার দায়িত্ব নিয়ে, যাত্রীরাও তেমনই সন্তুষ্ট এমন নারী কন্ডাক্টর পেয়ে। নানান হয়রানির খবরে সাধারণত রাজধানীর গণপরিবহনে নারীরা উঠতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন। সেখানে সোমাকে পেয়ে নির্দ্বিধায় যাত্রীরা উঠছেন তার বাসে।

আরেকজন নাজমা বেগম। স্বামীর মৃত্যুর পর একাই সামলাচ্ছেন পুরো সংসার। ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠে সংসারের কাজ সেরে চলে আসেন কর্মস্থলে। তারপর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন গাড়ি। চালক এলেই বের হন যাত্রীর সন্ধানে। দিনভর ব্যস্ত থাকেন যাত্রী সেবায়। যাত্রী ওঠা-নামা, ভাড়া আদায়সহ একাধিক দায়িত্ব তার।

তিনি ২০০৮ সাল থেকে দীর্ঘ ১৬ বছর চাকরি করছেন বাস কন্ডান্টর হিসেবে। শুরুতে পরিবার ও প্রতিবেশীর কটুকথার সম্মুখীন হলেও বর্তমানে সবাই তার কাজটি ভালোভাবে দেখছেন।

কাজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ রয়েছে তার, যাত্রীদের সঙ্গে এতটাই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে গেছে যে অনেক যাত্রী ফোন করে খোঁজ-খবর নেন নাজমার।

নাজমা এই বাসকে নিজের পরিবার মনে করেন। যাত্রীদের মনে করেন পরিবারেরই সদস্য। বন্ধের দিনে তার মনে হয় পরিবার থেকে দূরে আছেন। নাজমা তার ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর একা বাড়িতে ভালো লাগে না। তাই বন্ধের দিনেও তার কাজে ফিরতে আগ্রহ থাকে।

যাত্রীরাও খুশি নাজমার মতো এমন একজন কন্ডাক্টর পেয়ে।

এক নারী যাত্রী বলেন, নারী কন্ডাক্টর থাকায় যাত্রীরাও পাচ্ছেন অতিরিক্ত কিছু সুবিধা। কখন গাড়ি আসবে, কোন পথে যাবে, খবর নিতে ফোন করেন যাত্রীরা। নারী কন্ডাক্টর না হলে এমনটি সম্ভব হতো না, বলেন এই যাত্রী।

তবে এই দুজন চেয়ে কিছুটা ভিন্ন গল্প বাস কন্ডাক্টর হনুফার। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি। তার সাত সদস্যের পরিবারে রয়েছে চার মেয়ে, এক ছেলে ও স্বামী। অভাবি পরিবার। স্বামী কাজ করেন না, তাই পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে তাকে। বেছে নিতে হয়েছে এই চ্যালেঞ্জিং পেশা।

নারী হয়েও বাস কন্ডাক্টর! এমন বাক্যবাণে হনুফাও হতেন হাসি-তামাশার শিকার। কিন্তু এসব কান না দিয়ে কাজেই মনযোগ তার।

কন্ডাক্টারি করেই একে একে তিন মেয়েকে দিয়েছেন বিয়ে। এখন তার চার সদস্যের পরিবার। অন্যদের মতো তিনিও ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে সংসারের কাজ গুছিয়ে ছেলে-মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে আসেন কর্মস্থলে।

তিনি বলেন, সুশিক্ষিত মা যেমন উপহার দিতে পারে একটি সভ্য জাতি। তেমনই নারীর সাহসী পদক্ষেপ বদলে দিতে পারে পৃথিবী।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

লামা ফাঁসিয়াখালীর শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসাস্থল হায়দারনাশী গ্রামার স্কুল

রাজধানীতে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তিন নারী বাস কন্ডাক্টর!

আপডেট সময় : ০৪:৩৫:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪

খান মেহেদী :- প্রবল ইচ্ছা ও সাহস থাকলে যে সব অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়, তা দেখিয়েছেন সোমা, নাজমা ও হনুফা। কথায় আছে, যে নারী রাঁধে সে চুলও বাঁধে। আজ কোথাও থেমে নেই নারীরা। ঘরে কিংবা বাইরে পুরুষের পাশাপাশি সব জায়গায়ই নারীর অবস্থান; যারা স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছেন জীবন সংগ্রামের অকল্পনীয় চ্যালেঞ্জ। যাদের নিয়ে গর্ব করে তাদের আশপাশের মানুষ।

সোমা আক্তার। ১৮ বছর ধরে করছেন বাসের কন্ডাক্টারি। সকাল-সন্ধ্যা তার সময় কাটে যাত্রীসেবা দিতে। ডিউটি করেন রাজধানীতে নারীদের জন্য বিআরটিসির বিশেষ বাস সার্ভিসে।

একইসঙ্গে ঘর এবং চাকরি দুটোই সামলাচ্ছেন তিনি। সকালে ঘুম থেকে উঠে সংসারের কাজ সেরে চলে আসেন ডিউটিতে। বাস ধোয়া-মোছা থেকে শুরু করে যাত্রী ওঠানো-নামানো সব কাজই তার।

সোমা যেমন খুশি তার দায়িত্ব নিয়ে, যাত্রীরাও তেমনই সন্তুষ্ট এমন নারী কন্ডাক্টর পেয়ে। নানান হয়রানির খবরে সাধারণত রাজধানীর গণপরিবহনে নারীরা উঠতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন। সেখানে সোমাকে পেয়ে নির্দ্বিধায় যাত্রীরা উঠছেন তার বাসে।

আরেকজন নাজমা বেগম। স্বামীর মৃত্যুর পর একাই সামলাচ্ছেন পুরো সংসার। ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠে সংসারের কাজ সেরে চলে আসেন কর্মস্থলে। তারপর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন গাড়ি। চালক এলেই বের হন যাত্রীর সন্ধানে। দিনভর ব্যস্ত থাকেন যাত্রী সেবায়। যাত্রী ওঠা-নামা, ভাড়া আদায়সহ একাধিক দায়িত্ব তার।

তিনি ২০০৮ সাল থেকে দীর্ঘ ১৬ বছর চাকরি করছেন বাস কন্ডান্টর হিসেবে। শুরুতে পরিবার ও প্রতিবেশীর কটুকথার সম্মুখীন হলেও বর্তমানে সবাই তার কাজটি ভালোভাবে দেখছেন।

কাজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ রয়েছে তার, যাত্রীদের সঙ্গে এতটাই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে গেছে যে অনেক যাত্রী ফোন করে খোঁজ-খবর নেন নাজমার।

নাজমা এই বাসকে নিজের পরিবার মনে করেন। যাত্রীদের মনে করেন পরিবারেরই সদস্য। বন্ধের দিনে তার মনে হয় পরিবার থেকে দূরে আছেন। নাজমা তার ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর একা বাড়িতে ভালো লাগে না। তাই বন্ধের দিনেও তার কাজে ফিরতে আগ্রহ থাকে।

যাত্রীরাও খুশি নাজমার মতো এমন একজন কন্ডাক্টর পেয়ে।

এক নারী যাত্রী বলেন, নারী কন্ডাক্টর থাকায় যাত্রীরাও পাচ্ছেন অতিরিক্ত কিছু সুবিধা। কখন গাড়ি আসবে, কোন পথে যাবে, খবর নিতে ফোন করেন যাত্রীরা। নারী কন্ডাক্টর না হলে এমনটি সম্ভব হতো না, বলেন এই যাত্রী।

তবে এই দুজন চেয়ে কিছুটা ভিন্ন গল্প বাস কন্ডাক্টর হনুফার। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি। তার সাত সদস্যের পরিবারে রয়েছে চার মেয়ে, এক ছেলে ও স্বামী। অভাবি পরিবার। স্বামী কাজ করেন না, তাই পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে তাকে। বেছে নিতে হয়েছে এই চ্যালেঞ্জিং পেশা।

নারী হয়েও বাস কন্ডাক্টর! এমন বাক্যবাণে হনুফাও হতেন হাসি-তামাশার শিকার। কিন্তু এসব কান না দিয়ে কাজেই মনযোগ তার।

কন্ডাক্টারি করেই একে একে তিন মেয়েকে দিয়েছেন বিয়ে। এখন তার চার সদস্যের পরিবার। অন্যদের মতো তিনিও ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে সংসারের কাজ গুছিয়ে ছেলে-মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে আসেন কর্মস্থলে।

তিনি বলেন, সুশিক্ষিত মা যেমন উপহার দিতে পারে একটি সভ্য জাতি। তেমনই নারীর সাহসী পদক্ষেপ বদলে দিতে পারে পৃথিবী।