ফেনী প্রতিনিধিঃ ফেনী ইলাশ পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাদকাসক্ত স্বামীর রুবেলের বিরুদ্ধে ‘যৌতুক চেয়ে মারধর’ করার অভিযোগে মামলা করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তার স্ত্রী সাইমা আক্তার। প্রতিনিয়ত তাকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।মামলা তুলি না নেওয়া হলে তার ভাই বাবা সবাইকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।
কিছু দিন আগে সাইমা আক্তার তার মেয়েকে নিয়ে ফেনী গার্লস স্কুলে যাওয়ার পথে তার স্বামীর রুবেল ও দুই দেবর সহ শহীদ সেলিনা সড়ক পারভীন নামক স্থানে তার রিক্সা দাড করিয়ে তাকে নিয়ে টানা হাচড়া শুরু হয়।একপর্যায়ে তাকে বলে এখানে স্ট্যাম্পে সই কর সাইমা আক্তার বলে আমি কোথাও সই করব না,এই কথা বলার পর পর সায়েমা আক্তার কে কিল ঘষি শুরু করে, রুবেল সহ তার দুই ভাই মিলে, সায়মা আক্তার ও তার মেয়ে চিৎকার দেওয়া শুরু করলে, রুবেল তার হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে সাইমা আক্তারের কপালে আঘাত করে এরপর আশপাশের মানুষ এগিয়ে আসলে রুবেল ও তার দুই ভাই পালিয়ে যায়।খবর পেয়ে সাইমা আক্তারের ভাই সাইমাকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।এরপর তার কপালে ওর শরীরে বিভিন্ন স্থানে সেলাই করা হয়। চিকিৎসা শেষে ফেনী জজ কোডে মামলার করা হয় ,আদালত মডেল থানাকে মামলা তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,খুলনা বাগেরহাটের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে সাইমা আক্তারের সাথে।পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের ইলাশপুর গ্রামের বকু পুলিশের বাড়ির মৃত আলমগীর হোসেনের ছেলে মোঃ রুবেলের সাথে ২০১২ সালে তাদের প্রেমের সম্পর্ক করে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে সায়মা আক্তার জানতে পারে রুবেলের আগেও দুইটি বিয়ে হয়েছে এবং ওই ঘরে তার ছেলে মেয়ে রয়েছে। এবং বিয়ের পর থেকেই রুবেল যৌতুকের জন্য তার স্ত্রী সাইমা আক্তার কে নির্যাতন করে আসছিলেন।
এর কিছুদিন পর নির্যাতনের মাত্রা এতই বেড়ে গেছে সাইমা আক্তারের দুই হাতে দুইটি আঙ্গুল ভেঙ্গে দেয়।এর কিছুদিন পর যৌতুকের জন্য রুবেল সাইমা আক্তারকে বেদম মারধর করলে সাইমা আক্তার ৯৯৯ ফোন করে পুলিশ আনে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়।
এরপর সায়মার ভাই জুয়েল নিরুপায় হয়ে রুবেলের ভয় ভীতি দেখানোর কারণে আবার সায়মাকে রুবেলের বাসায় দিয়ে আসছে।এর এক সপ্তাহ পর আবারো সাইমাকে নির্যাতন করা হয়, নির্যাতনের পর খবর পেয়ে সায়মার ভাই জুয়েল ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় সায়মার পুরো শরীরে রক্তাক্ত সাইমার ভাই সাইমাকে উদ্ধার করে আবার ফেনীর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়,চিকিৎসা শেষে এ ঘটনায় সাইমা আক্তার বাদী হয়ে ফেনী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্বামী রুবেলের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
আদালত মামলাটির তদন্ত করতে পুলিশ সাপোর্ট সেন্টারকে নির্দেশ দেয়। তদন্ত করার পর ঘটনার সত্যতা পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ।এরপর স্বামীকে গ্রেপ্তার পুলিশ, জামিনে বের হয় স্বামী রুবেল এরপর থেকে সাইমা আক্তার তার ভাই বাবাকে হুমকি ধুমকি দিয়ে আসছে মামলা তুলি না নেওয়া হলে তাদেরকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দেয় রুবেল। এবং কি তাদের বিরুদ্ধে দুই থেকে তিনটি মামলা দেওয়া হয়।এর মাঝে দুইটি মামলা পুলিশ তদন্ত করে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। সাইমা আক্তার স্বামীকে আদালতের নির্দেশে তালাক দেয়, ওই তালাকও স্বামী রুবেল মানে না সে জোর করে সাইমা আক্তার কে নিয়ে সংসার করে প্রতিশোধ নিবে বলে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে থাকে।
সাইমা আক্তারের স্বামী রুবেল হুমকি দিয়ে বলে সাইমা আক্তার কে তার কাছ থেকে কেউ নিতে পারবে না,যত টাকা লাগে ও খরচ করবে সাইমাকে তার ঘরে নিবে নিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার প্রতিশোধ তুলবে এই বলে সাইমার বাবা ভাইকে হুমকি দিয়ে থাকে রুবেল।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী সাইমা আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার স্বামী মোঃ রুবেল একজন মাদকাসক্ত। সে নিয়মিত ইয়াবা খায় এবং কোন কাজ কর্ম করে না। বিভিন্ন সময় তাকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিয়েছি। কিন্তু নেশার টাকার জন্য সে প্রতিনিয়ত আমাকে মারধর করে। তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আমি মামলা করতে বাধ্য হয়েছি। এখন সে আমাকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছে এবং মামলা তুলে না নিলে খুন করে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে আমি এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছি।সে আমাকে ২০১৮ সালে বাথরুম থেকে হারপিক নিয়ে জোর করে খেয়ে দিয়েছে আমার ভাই বাবা ঢাকা মেডিকেল কলেজে টানা সাত মাস চিকিৎসা করিয়ে ভালো করে, যার কারণে আমি এখনো ভাত গিলে খেতে কষ্ট হয় আস্তে আস্তে পানি দিয়ে খেতে হয়, আজকে আমার পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে।আমাদের অপরাধ একটাই আমরা গরীব অসহায়
এ ব্যাপারে জানার জন্য মোঃ রুবেলের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ এর চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কাওসার জানান আদালতে মামলা হয়েছে আদালত মামলা তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন, মামলা এখনো তদন্তাধীন কিছুদিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করবো।
এ বিষয়ে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।