রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন যাবত মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার আড়ালে এমএলএম ব্যবসার নামে প্রতারনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে বলে জানা যায়। তারা পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন বিভিন্ন ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার নামের মাধ্যমে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে।
দুপুরে কাওরানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন,তারা মূলত সমাজের নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তদের টার্গেট করে মাসিক ১০,০০০ টাকা থেকে শুরু করে মাসিক ১,২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সংস্থাটির দাতা সদস্য বানানোর কথা বলে অনুদান হিসেবে জন প্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতো। এরই মধ্যে প্রায় সহশতাধিক মানুষের কাছে থেকে প্রতারনা করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করে আসছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই প্রতারক চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় অদ্য ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ইং তারিখ আনুমানিক ১..ঘটিকায় র্যাব-১ উত্তরা, ঢাকা এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে, ডিএমপি ঢাকার বাড্ডা থানাধীন প্রগতি স্বরনি, মধ্য বাড্ডা এলাকার প্লট নং-৫ (এ-৫), বাড়ী নং-খ-১৮৭, ৬ষ্ঠ তালা “বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা” এর অফিসে অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক চক্রের মূল হোতা মোঃ আব্দুল কাদের (৪৪)মির্জা নাসির উদ্দিন (২৫), মোঃ মাহফুজুর রহমান (৫০)এ আর আব্দুল মোমেন (৪৯), মোঃ মেহেদী হাসান (২৫)মোঃ আমজাদ হোসেন (৩৪)মোঃ মঞ্জুরুল হাসান খান (৩৫)মোঃ আব্দুল বারিক (৩৮)মোঃ রুহুল আমিন (২৫)মোছাঃ মুন্নি (৩০)মোঃ নিলুফা ইসলাম নিপা (৩৪),ঢাকা’দ্বয়কে গ্রেফতার করে।
এসময় ধৃত অভিযুক্তদের নিকট হতে ০১ জন ভিকটিম, ০৪ টি কম্পিউটার, ০৪ টি ল্যাপটপ, ১৭ টি মোবাইল, নগদ ৯৭,৩৮০/- টাকা এবং বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই, ভাউচার, চুক্তিনামা,প্যাড, সীল ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়।
অভিযুক্ত মোঃ আব্দুল কাদের (৪৪)’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে ২০২০ সালে ডিএমপি ঢাকার বাড্ডা থানাধীন প্রগতি স্বরনি, মধ্য বাড্ডা এলাকার প্লট নং-৫ (এ-৫), বাড়ী নং-খ-১৮৭, ৬ষ্ঠ তালায় “বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা” নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে। পরবর্তীতে সে “বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা” এ প্রতিষ্ঠানের আড়ালে বহুল প্রচলিত ‘এমএলএম’ ব্যবহার করে তার ব্যবসার প্রসার ঘটায়। অভিযুক্ত মোঃ আব্দুল কাদের (৪৪) ও তার সহযোগীরা মূলত সমাজের নি¤œবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তদের টার্গেট করে মাসিক ১০,০০০ টাকা থেকে শুরু করে মাসিক ১,২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সংস্থাটির দাতা সদস্য বানানোর কথা বলে, অনুদান হিসেবে জন প্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতো। কাজের নামে দাতা সদস্যদের দিয়ে এমএলএম আদলে নতুন দাতা সদস্য সংগ্রহের কাজ করানো হতো। তাদেরকে বলা হতো ৩০,০০০ টাকা দিয়ে দাতা সদস্য হবার পর বেতন ১০,০০০ টাকা হবে। কাজ হিসেবে বলা হত এলাকায় বাল্যবিবাহ হলে কোন দরিদ্র পরিবার অর্থাভাবে মেয়ে বিয়ে দিতে না পারলে এবং নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলা হলে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের জানাতে। এমন সহজ চাকরির আশায় ৩০,০০০ টাকা দিয়ে দাতা সদস্য হবার পর তাদেরকে জানানো হতো নতুন দাতা সদস্য আনতে হবে। নতুন সদস্য আনতে না পারলে বেতন হবে না। অথচ এ চক্রটি টাকা নেওয়ার আগে লোক সংগ্রহের বিষয়ে কিছুই বলা হতো না।
ভুক্তভোগীরা টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়ে বেতন না পেয়ে রাজধানীর মধ্য বাড্ডার অফিসে গেলে তাদের মামলা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার ভয় দেখানো হতো। অধিকাংশ সদস্যই সমাজের নি¤œ ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। এভাবে অভিযুক্ত মোঃ আব্দুল কাদের (৪৪) কয়েক হাজার গ্রাহকদের সাথে প্রতারনা করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। ধৃত সকল অভিযুক্তরা প্রতারণার সাথে জড়িত আছে মর্মে স্বীকারোক্তি প্রদান করে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।