মোঃ জসীম উদ্দিনঃ
- র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন(র্যাব-১)প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, কিশোর গ্যাং, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে।
গত ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ গাজীপুরের বাসন এলাকায় পরিত্যাক্ত অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ভিকটিমের গাড়িটি উদ্ধার করে। পরবর্তীতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ভিকটিমের মায়ের হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে ভিকটিমকে অপহরণের বিষয়টি জানায় এবং ভিকটিমের পরিবারের নিকট ২ কোটি টাকা মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করে এবং ভিকটিমকে পাশবিক কায়দায় নির্যাতনের ভিডিও ভিকটিমের পরিবারের নিকট প্রেরণ করে। এমতাবস্থায় ভিকটিমের মামা গত ৬ জানুয়ারি বাদী হয়ে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি অপহরণের মামলা দায়ের করেন।
ভিকটিমের মা তার ছেলেকে উদ্ধারে র্যাব-১ নিকটও অভিযোগ দায়ের করেন। উক্ত অপহরণের ঘটনাটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হলে ব্যাপক আলোচিত হয়। উক্ত অপহৃত ভিকটিম’কে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-১ এর গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা র্যাব-১ র্যাব-৯ ও র্যাব-১৪ এর আভিযানিক দল সুনামগঞ্জের তাহিরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা ও পরিকল্পনাকারী মোঃ আব্দুল মালেক (৩৫) ও তার অন্যতম সহযোগী ও পরিকল্পনাকারী ড্রাইভার ছামিদুল ইসলাম (৩০) শেরপুরদেরকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত রাতে অপহৃত ভিকটিম হাসিবুর রহমান হিমেলকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থেকে উদ্ধার করা হয় এবং রনি নাবাল (৪১)কে গ্রেফতার করা হয়।
দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন সাংবাদিকদের জানান ভিকটিম হিমেল এর বাবা ব্যাটারী বিক্রয়ের ব্যবসা পরিচালনা করতেন। ভিকটিম হাসিবুর রহমান হিমেল রাজধানীর উত্তরার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ৪র্থ বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন। ভিকটিমের বাবা ৪ মাস পূর্বে মৃত্যুবরণ করার পর তার ছেলে ভিকটিম হিমেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি তার বাবার ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
ভিকটিম হিমেল গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ সকালে রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে শেরপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে তার ড্রাইভার গ্রেফতারকৃত ছামিদুলকে নিয়ে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার যোগে রওনা করেন। পরবর্তীতে ভিকটিম হিমেল গাজীপুরে সালনা এলাকায় পৌঁছালে গ্রেফতারকৃতদের দ্বারা অপহরণের শিকার হন।
তিনি আরো জানান যে,অপহরণ চক্রের মূলহোতা গ্রেফতারকৃত মালেক এবং অন্যতম পরিকল্পনাকারী গ্রেফতারকৃত ছামিদুল। গ্রেফতারকৃত ছামিদুল ভিকটিম হিমেলের বাসায় ৪ বছর যাবত গাড়ি চালক হিসেবে চাকরি করায় সুস্মপর্ক তৈরি হয় এবং তাদের পারিবারিক আর্থিক ও সম্পত্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সে জানতো।
গত ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে গ্রেফতারকৃত মালেকের নেতৃত্বে গ্রেফতারকৃতরা উত্তরার একটি জায়গায় সমবেত হয় এবং গ্রেফতারকৃত মালেক ও ছামিদুল হিমেলকে অপহরণ করে তার পরিবারের নিকট থেকে বিপুল অংকের মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনার বিষয়টি তাদের অন্যান্য সহযোগিদের জানায়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গ্রেফতারকৃত ছামিদুল ভিকটিম হিমেলকে শেরপুরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যাটারী বিক্রয়ের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে হিমেলকে শেরপুরে যেতে আগ্রহী করে।
তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিম হিমেলকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে পাহাড়ী টিলা এলাকা থেকে উদ্ধার করে এবং অপহরণ চক্রের সদস্য রনিকে গ্রেফতার করে। এসময় অপহরণ চক্রের ০২ জন সদস্য পালিয়ে যায়।গ্রেফতারকৃত মালেকের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত রাতে রাসেল ও বিল্লালকে রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখ্য যে ভিকটিমকে উদ্ধারকালে ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।গ্রেফতারকৃতরা একাধিক মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত রাতে রাজধানীর উত্তরা হতে মোঃ রাসেল মিয়া (৩৪) ও মোঃ বিল্লাল হোসেন (২৪)দেরকে গ্রেফতার করে।অভিযানে উদ্ধার করা হয় ১টি বিদেশি পিস্তল,২ রাউন্ড গুলি ও ২টি ওয়াকিটকি সেট। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা উক্ত অপহরণের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।