নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-দুবাই রুটে কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়ে যাত্রীরা প্রতিনিয়ত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা? এই রুটের ইন-ফ্লাইট সার্ভিসের মান দিন দিন খারাপ হওয়ায় যাত্রীদের যেন ভোগান্তিরও শেষ নেই।
বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে (বোয়িং-৭৮৭) ঢাকাগামী ফ্লাইটের যাত্রীদের ইন-ফ্লাইটে অসহনীয় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। শুধু ফ্লাইটের ভেতরেই যে তাদেরকে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে তা নয়, ফ্লাইট থেকে নামার পরও ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের আরেক দফা হয়রানি ও ভোগান্তি সহ্য করতে হয়েছে।
এসব অনিয়ম বিমানবন্দরে যাদের দেখার কথা, তারা বিষয়টিকে তেমন ‘গুরুত্ব’ দিচ্ছেন না বলে যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে যাত্রীরা দাবি করছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সুনাম রক্ষায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে সদ্য যোগ দেয়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার যাত্রীসেবাসহ সার্বিক বিষয়ে মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদার করা দরকার। নতুবা যাত্রীদের এমন হয়রানির ঘটনা দিন দিন বাড়তে থাকবে।
যদিও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম দু’দিন আগে নয়া দিগন্তকে বলেছেন, তিনি চেষ্টা করছেন বিমানে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনতে। এ ক্ষেত্রে তিনি যাত্রীসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
গত ৯ জানুয়ারি রাতে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। সোয়া পাঁচ ঘণ্টা উড়ে পরদিন ১০ জানুয়ারি সকালে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানটি অবতরণ করে। এই ফ্লাইটের যাত্রীদের ইন-ফ্লাইটে টয়লেট বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পারেননি। কারণ বাথরুম নষ্ট। এমন অসহনীয় দুর্ভোগ যাত্রীদের সহ্য করতে হয়েছে বলে ঢাকায় ফেরা এক দম্পতিসহ অন্যা যাত্রীরা বিমানবন্দরেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শুধু ফ্লাইটের ভেতরেই সমস্যা হয়েছে তা কিন্তু নয়; বিমানের ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ করার পর নিয়ম অনুযায়ী বোর্ডিং ব্রিজ পাওয়ার কথা; কিন্তু সেখানে না নিয়ে ট্যাক্সিওয়েতে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে গাড়িতে তাদের টার্মিনাল বিল্ডিংয়ে ফিরতে হয়। ইমিগ্রেশন শেষে বেল্ট থেকে লাগেজ পেতেও তাদের দীর্ঘসময় ভোগান্তি সহ্য করে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
এই ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন উত্তরার বাসিন্দা ও প্যান ব্রাইট ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ রুহুল আমিন মিন্টু ও তার স্ত্রী। তারা দু’জনে নয়া দিগন্তকে ওই রাতের ফ্লাইটের সমস্যার কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই পাল্টা প্রশ্ন করে জানতে চান, একটি ফ্লাইটে প্রায় ৩০০ যাত্রী। দুবাই থেকে ঢাকায় আসতে আমাদের সময় লেগেছে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা। অথচ এই ফ্লাইটের পাঁচটি টয়লেটের মধ্যে দেখেছি তিনটি নষ্ট। একটি ফ্লাইটে তিনটি বাথরুম কিভাবে নষ্ট থাকে? তারা বলেন, আমাদের জানা মতে, বিজনেস ক্লাসের যাত্রীদের জন্য বাথরুমটি ভালো ছিল। এ ছাড়া ইকোনমি ক্লাসের চারটির মধ্যে তিনটি বাথরুম নষ্ট। বাথরুমগুলো নষ্ট থাকায় যাত্রীদের কী ধরনের সমস্যা হতে পারে তা আপনারা বুঝে নেন। কেবিন ক্রুদের কাছে জানতে চাইলে তারা এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে এমন সমস্যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না বলে তারাসহ অন্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই ফ্লাইটের অপর একজন যাত্রী বলেন, টয়লেট নষ্টের কারণে আমাদের একদফা ভোগান্তি হয়েছে। এর সাথে ঢাকায় বিমান নামার পর বোর্ডিং ব্রিজে যায়নি আমাদের বিমান। অথচ ওই সময়ে দেখা গেল এয়ার অ্যারাবিয়ার মতো ছোট্ট এয়ারক্রাফটও বোর্ডিং ব্রিজ পেল। সিভিল অ্যাভিয়েশন এসব কি দেখে না? বিমানের ৩০০ যাত্রীকে ট্যাক্সিওয়েতে নামিয়ে দেযা হলো। এরপর গাড়ি ভর্তি করে যাত্রীদের আনা হলো টার্মিনালে। এভাবে অনেক সময় কাটিয়ে ইমিগ্রেশনের পর লাগেজ পেতে শুরু হয় আরেকদফা ভোগান্তি। এভাবেই ঢাকা-দুবাই রুটে যাত্রীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তি সহ্য করছে বলে তারা অভিযোগ করেন। তাহলে এসব দেখার দায়িত্ব কার? এমন প্রশ্ন রেখে তারা বলেন, এমডি হিসেবে নতুন যিনি বিমানের দায়িত্বে এসেছেন তাকে চেয়ারে বসে থাকলে সমস্যার সমাধান হবে না। সপ্তাহে অন্তত দু’দিন হলেও বিমানবন্দর টার্মিনালে গিয়ে দেখতে হবে। বিমানের যেসব ফ্লাইট ওঠানামা করছে ওই ফ্লাইটের যাত্রীদের সাথে কথা বলতে হবে। কোথায় কোথায় সমস্যা আছে সেগুলো চিহ্নিত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিমান এভাবে চলতে পারে না বলে তারা প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই ফ্লাইটে বিজনেস ক্লাসের যাত্রী ছিল হাতেগোনা। এ নিয়েও ভাবতে হবে বলে তারা বলেন।
গতকাল সোমবার বিকেলে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনালের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে উড়োজাহাজের টয়লেট নষ্ট থাকা বিষয়ক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এসব দেখার কথা বিমানের ফ্লাইট অপারেশন্স ও প্রকৌশল বিভাগের। আর বোর্ডিং ব্রিজ সম্পর্কে সিভিল অ্যাভিয়েশন ভালো বলতে পারবে বলে জানান তিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিমানের কাস্টমার সার্ভিসে সমস্যার কথা জানিয়ে যে কেউ অভিযোগ করলে আমরা সাথে সাথে কী হলো, কেন এবং কখন হলো এসব খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
এই ঘটনাটি কয়েকদিন আগের। তারপরও আমরা খোঁজ নিচ্ছি। এক প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, ৯ জানুয়ারি রাতে দুবাই থেকে বিমানের যে ফ্লাইট এসেছিল সেটি সম্ভবত ড্রিমলাইনার হতে পারে। আমরা ওই ফ্লাইটের খোঁজ নিয়ে সে দিন যাত্রীদের কী কী সমস্যা হয়েছিল তা জানার চেষ্টা করছি। এর আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিম নয়া দিগন্তকে বলেছিলেন, আমার বাংলাদেশ বিমানে যোগদান করার আজ এক মাস পূর্ণ হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আমি বিমানের কোথায় কোথায় গ্যাপ আছে সেগুলো জানার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে কিছু সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সবার সহযোগিতা পেলে বিমানের ভাবমর্যাদা ফিরিয়ে লাভজনক অবস্থায় নিয়ে যেতে পারব।