বর্তমান সময়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী, প্রতারক চক্র, চাঁদাবাজ, ধর্ষণকারী, নৈরাজ্যকারী, বিভিন্ন মামলার আসামী, অপহরণকারী,ছিনতাইকারী এবং ডাকাতসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব-৩ সদা সচেষ্ট।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন মহাসড়ক ও ডাকাতদের আতঙ্ক রাজধানীসহ সারা দেশের মহাসড়কে চলাচলরত কাবার্ড ভ্যান ও মালবাহী গাড়ির ড্রাইবারসহ সাধারন পথচারী।তারাই ধারাবাহিকতয়া গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ইং কুমিল্লা জেলার লালমাই থানাধীন কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে গতিরোধ করে মালামালসহ পন্যবাহী পিকআপ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
উক্ত ঘটনার ভিকটিম শাহেদুল হক রাজধানীর কদমতলী থানাধীন দক্ষিণ দনিয়া এলাকায় ভাড়া থাকেন এবং একটি পিকআপ ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ রাজধানীর কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকার অক্সিকন কনস্ট্রাকশন এডমিক্সার কোম্পানীর হেড অফিস হতে ১২৫ টি (২০০০ কেজি) অক্সিকন কনস্ট্রাকশন এডমিক্সার নিয়ে নোয়াখালী জেলার উদ্দেশ্যে রওনা করেন।
পথিমধ্যে রাত ৩ঃ৩০ ঘটিকায় কুমিল্লা জেলার লালমাই থানাধীন কুমিল্লা টু নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের শানিচৌ নামক স্থানে একদল ডাকাত একটি সাদা বলেরো পিকআপ যোগে তার সামনে গিয়ে গতিরোধ করে। ডাকাত দল ভিকটিমকে তার পিকআপ হতে টেনে-হিচড়ে নামিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে মারপিট করতে থাকে। তারা ভিকটিম শাহেদুলকে চাপাতি,সুইচ-গিয়ারসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদর্শন করে এবং তার হাত-পা রশি দিয়ে ও মুখ টেপ দিয়ে বেধে মালামালসহ তার পিকআপটি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে এলাকাবাসী এসে আহত ও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ভিকটিমকে উদ্ধার করে এবং নিকটস্থ থানায় সংবাদ দেয়। উক্ত ঘটনায় কুমিল্লা জেলার লালমাই থানায় ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে অজ্ঞাত ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে একটি দস্যুতার মামলা করা হয়। উক্ত ঘটনায় জড়িত আসামীদেরকে আইনের আওতায় আনতে
র্যাব-৩ গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৩ এর একটি চৌকশ আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ ১০ ঘটিকায় রাজধানীর কদমতলী থানাধীন মুক্তি ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন সাকিব টি-স্টলের সামনে অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের নেতা মোঃ আবুল হোসেন (৩৫) ও তার অন্যতম সহযোগী মোঃ রহমত আলী (২৮)মোঃ জসিম মিয়া (৩৩)মোঃ নয়ন মিয়া (২৪) এবং মোঃ ইব্রাহীম (২৬)নারায়নগঞ্জদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত উপরোক্ত ৫ জনের দেয়া তথ্যমতে ১ জানুয়ারি ২০২৪ ইং রাত ১.৩০ ঘটিকায় রাজধানীর কদমতলী থানাধীন শনির আখড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের সদস্য মোঃ ইদ্রিস (২৩)মোঃ মাসুদ রানা (২৬)মোঃ কফিল উদ্দিন (৩২)হাসান আলী (২৩)দের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
দুপুরে র্যাব-৩ এর প্রধান কার্যালয়ে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেঃকর্ণেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান দুর্ধর্ষ এই ডাকাত দলটির সকল সদস্যই বর্তমানে রাজধানী, ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে। তারা দৃশ্যমান পেশা হিসেবে বিভিন্ন পেশায় কাজ করলেও ডাকাতিই তাদের মূল পেশা। গ্রেফতারকৃত আবুলের নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়ার পর হতে অদ্যাবধি তারা বেশকয়েকটি মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহনে ডাকাতি, বাসে ডাকাতি, ঘরবাড়ি ও দোকানে ডাকাতি এবং প্রবাসী যাত্রীদের টার্গেট করে ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায় যে, তারা মহাসড়কে নির্জন কোন স্থানে এসে টার্গেটকৃত গাড়িটিকে ওভারটেক করে গতিরোধপূর্বক গাড়িতে থাকা ড্রাইভারসহ সকলকে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র, সুইচ গিয়ার, চাপাতি, স্টীলের পাইপ ইত্যাদি দ্বারা মারপিট করে ও প্রাণে মেরে ফেলার ভয়ভীতি দেখিয়ে হাত-পা ও মুখ বেঁধে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গাড়ি এবং মালামাল নিয়ে দ্রæত স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা ডাকাতি করা মালামাল এবং গাড়িগুলো বিভিন্ন চোরাকারবারীদের কাছে বিক্রি করে দেয়।র্যাব-৩ এর আভিযানিক দল কর্তৃক হাতেনাতে গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতারকালে তাদের হেফাজত হতে ছিনতাইকৃত ১২৫ ড্রাম অক্সিকন কনস্ট্রাকশন এডমিক্সার বোঝাইসহ ১টি পিকআপ এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত আরও ১টি বলেরো পিকআপ,১টি চাপাতি, ১টি ছুরি,৩টি লোহার রড, ১টি স্ক্রু ডাইভার, ০১ টি টেপ, ০৪ টি ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১টি পিকআপ, ১টি চাপাতি,১টি ছুরি,৪টিসগামছা,৩টিস রশি,৫টি মোবাইল ফোন,১টি হাত ঘড়ি এবং নগদ ৭৩১০/- টাকা উদ্ধার করা হয়।এছাড়াও উপরোক্ত ৪ জনের দেয়া তথ্যমতে ১লা জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ ২২ ঘটিকায় রাজধানীর শনির আখড়া এলাকা হতে দলের অন্য সহযোগী মোঃ জুয়েল (৩৫)মোঃ আলমাস (২৭)১ টি চোরাই পিকআপ ও ২টি মোবাইলসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।