নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম ইউসুফ আলী ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং কোম্পানি সচিব মোস্তফা হেলাল কবির সিন্ডিকেটের নজিরবিহীন অনিয়ম, দুর্নীতি আর প্রতারণায় ডুবতে বসেছে বেসরকারিখাতের জীবন বিমা কোম্পানি পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এমডির অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কবলে পড়ে এক সময়ের জনপ্রিয় এবং ব্যবসা সফল এই বিমা কোম্পানিটি এখন ধুকছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিএম ইউসুফ আলী ও কোম্পানি সচিব মাস্তফা হেলাল কবিরের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। ২০২১ সালের শুরুর দিকে তৎকালীন চেয়ারম্যান ও পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স এর উদ্যোক্তা পরিচালক হাসান আহমেদকে অবৈধভাবে সরিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে বিএম ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে।
পরিচালনা পর্ষদ সভায় ষড়যন্ত্র করে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে একটানা ১৩ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা হাসান আহমেদকে সরিয়ে দেয় বিএম ইউসুফ আলী সিন্ডিকেট। এমডির অবৈধ কর্মকান্ডের প্রতিকার চেয়ে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) অভিযোগও দিয়েছিলেন হাসান আহমেদ। বিএসইসিতে অভিযোগ দেওয়ার পাশাপাশি আদালতেরও দ্বারস্থ হয়ে কোনও কাজ হয়নি। উল্টো বিএম ইউসুফ আলী ও মোস্তফা হেলাল কবির নানা ধরনের মামলা-হামলা, হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করেন হাসান আহমেদ ও তার পরিবারকে । বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল করে হাসান আহমেদের অর্থ সম্পদ লুটপাট করে। অসুস্থতা ও কোম্পানি কর্মকর্তাদের বিশ্বাস ঘাতকতার মানষিক নির্যাতনের ধকল সইতে না পেরে হাসান আহমেদ মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিজের, পরিবারের ও কষ্টের প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা চেয়েছিলেন হাসান আহমেদ। দুর্ভাগ্য তাদের বিচার দেখে যেতে পারেননি।
হাসান আহমেদের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী-সন্তানকে বঞ্চিত করার নতুন খেলায় মেতে উঠেছেন বিএম ইউসুফ আলী ও মোস্তফা হেলাল কবির সিনডিকেট হাসান আহমেদের বাক প্রতিবন্ধী ভাই কবির আহমেদকে ফুঁসলিয়ে বিএম ইউসুফের ভাই বিএম শওকতসহ অন্যান্যরা মিলে হাসান পরিবারের সমস্ত সম্পত্তি আত্মাসাতের চক্রান্ত করছে। তার অংশ হিসেবে হাসান আহমেদের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। আবার হাসান আহমেদের স্বাক্ষর জাল করে প্রায় ২৬ কোটি টাকা আত্মাসাৎ করেছেন বিএম ইউসুফ আলী ও মোস্তফা হেলাল কবির সিন্ডিকেট। এ বিষয়ে পপুলাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান হাসান আহমেদের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস চিফ মেট্রো পলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে একটি মামলাও করেছেন। যার নং ৩১৮/২০২১। মামলাটি এখন বিচারাধীন। এছাড়াও হাসান আহমেদের মৃত্যুর পর পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্সের শেয়ার ধেকে জান্নাতুল ফেরদৌসকে বঞ্চিত করার পাশপাশি নানাভাবে হয়রানি করছেন বিএম ইউসুফ। ফলে স্বামীর মৃত্যুর পর তিন সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি। পপুলার লাইফে নিজের অধিকার ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি বিএম ইউসুফ গংদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন জাজান্নাতুল ফেরদৌস।
এদিকে বিএম ইউসুফ আলীর সংশ্লিষ্টতার পর থেকেই বিতর্ক তালিকায় বারবার নাম ওঠে এসেছে পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্সের। বিমাখাতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ বিধিমালায় কোনো ইন্সুরেন্স কোম্পানির সিইও বা অন্য নির্বাহী কর্মকর্তারা একইসঙ্গে অন্য কোন কোম্পানির পরিচালনা বা ব্যবস্থাপনায় থাকতে পারবেন না। এমন বিধান থাকলেও তা মানেনি পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিইও এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের (বিআইএফ) প্রেসিডেন্ট বিএম ইউসুফ আলী এবং অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কোম্পানি সচিব মোস্তফা হেলাল কবির। তারা উভয়েই এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্সুরেন্সের পর্ষদে রয়েছেন। বিষয়টি জানার পরও এ নিয়ে দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।
এর আগে ২০১৬ সালে দুদকের তদন্তে ওঠে আসে পপুলার লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বি এম ইউসুফ আলী ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বি এম শওকত আলীসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা ব্যবস্থাপনা খরচ দেখিয়ে ২৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা নিজেরা ভাগ করে নিয়েছেন। তবে রহস্যজনক কারনে সেই অনুসন্ধান বিষয়ে পরবর্তীতে আর কিছু জানা যায়নি।
দীর্ঘদিন ধরে পপুলার লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পদ আগলে রাখা বিএম ইউসুফ আলী এক সময় ছিলেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর সক্রিয় কর্মী। ২০১৩ সালের ২৩ আগস্ট পরিস্থিতি বুঝে সুযোগসন্ধানী বিএম ইউসুফ ঢাকঢোল পিটিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল তার জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পত্তিকে বৈধতা প্রদান ও পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি দখলের নীল নকশা বাস্তবায়ন করা। পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স বিএম ইউসুফ আলীকে যে হাসান আহমেদ চাকরী দিয়েছিলেন, সেই হাসান আহমেদকেই প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে দিয়েছেন ইউসুফ আলী। গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। হাসান আহমেদ মৃত্যুর আগে তার ভিডিও বার্তায় অভিযোগ করে গিয়েছিলেন ইউসুফ আলী পপুলার লাইফের গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। দেশে বিদেশে নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন অজস্র সম্পদ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পপুলার লাইফের একটি সূত্র জানায় দরিদ্র পরিবারের সন্তান ইউসুফ আলী গত দুই দশকে অভিজাত বনে গেছেন। চাকরীর টাকায় এমন উত্থান একেবারেই অসম্ভব। সবই এসেছে পপুলার লাইফে করা দুর্নীতি থেকে। সূত্র মতে বিএম ইউসুফ আলীর সম্পত্তির তালিকায় রয়েছে বাড়ি নং ৬, রোড নং -৪, সেকশন ১১, মিরপুর, পল্লবী ঢাকার বাড়ি, রোড নং -১০/এ , বাড়ি নং ৫১/এ ধানমন্ডির বাড়ি, নারায়ণগঞ্জ গাউছিয়ায় নূর ম্যানশনে নিজের নামে বাড়ি, আমেরিকার বাফেলোতে দুটি বাড়ি ও দুটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় প্রায় ৩০ টির বেশি ফ্ল্যাট। একইভাবে বিপুল সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সচিব মোস্তফা হেলাল কবির। পরিজাত ভিলা, কে এম দাস লেন রোড, ১৩/ক/১/৬, টিকাটুলী ওয়ারী ঢাকার ১০ তলা বাড়ি, বেনামে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার, বাফেলোতো বিএম ইউসুফের সঙ্গে অংশীদারিত্বে বাড়ি ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। ইতিমধ্যে বিএম ইউসুফ আলী ও মোস্তফা হেলাল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে বাংলাদেশ ফিনানশিয়াল ইনটিলিজেন্স ইউনিট বিএফআইইউ। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল বিএম ইউসুফ আলী ও মোস্তফা হেলাল কবিরকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও কোন রেসপন্স পাওয়া জায়নী।
চেয়ারম্যানঃ-আব্দুর রহিম খান,
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো : মাসুদ রানা
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ঢাকার বার্তা ২৪