মাসুদ রানা,সিনিয়র রিপোর্টারঃ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) একটি আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা যা দ্রুততম সময়ে গ্রহনযোগ্য এবং বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত নিশ্চিত করা সংস্থা।
গত ২০১৫ সালে নিজ হাতে মেয়েকে খুন করে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করে বার বার নারাজী এবং পরে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে মামলা করে পিবিআই ঢাকা জেলার জালে ধরা পড়লো বাবা আঃ কুদ্দুছ খাঁ (৫৮)। তার বাড়ি টাঙ্গাইলে, খুন করেছে জয়পুরহাটে এবং ধরা পড়েছে ঢাকা জেলা পিবিআই এর তদন্তাধীন মামলায়।
গত ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ইং বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দীতে লোমহর্ষক, বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের বিবরণ তুলে ধরেন বাবা আঃ কুদ্দুছ খাঁ।ঘটনার শুরু ২০১২ সালে। সেই বছর আঃ কুদ্দুছ খাঁর মেয়ে মোছাঃ পারুল আক্তার টাঙ্গাইলের কালিহাতির একই এলাকার মোঃ নাছির উদ্দিন বাবু (১৯) কে ভালবেসে ঢাকায় পালিয়ে এসে বিয়ে করে। এই ঘটনায় কুদ্দুছ খাঁ ২০১২ সালে কালিহাতি থানায় জিডি করেছিলেন। উভয়ের পরিবার বিয়ে মেনে না নেয়ায় তারা ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়ায় বসবাস শুরু করে। চাকরি নেয় পোষাক কারখানায়। পারিবারিক অশান্তি চলতে থাকে।পারুল তার বাবাকে ফোন করে পারিবারিক অশান্তির কথা জানায়। বাবা মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিল। অপমান বোধ ও প্রচন্ড রাগও ছিল। এক পর্যায়ে ভালো ছেলে দেখে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে উন্নত জীবন যাপনের লোভ দেখায়। ১৮ জুলাই ২০১৫ সালে নাসির তার নানীকে দেখতে যায়। সেই সুযোগে বাবার দেয়া আশ্বাসে পারুল ১৯ জুলাই তার বাবাকে ফোন করে টাঙ্গাইলে যায়। একই দিন পারুল আক্তারের স্বামী মোঃ নাছির উদ্দিন আঃ কুদ্দুছ খাঁর বিরুদ্ধে মেয়েকে বাবার বাড়ি পালিয়ে যেতে প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে আশুলিয়া থানায় জিডি করে।
১৯ জুলাই ২০১৫ বাবা তার মেয়েকে নিজ বাড়িতে না নিয়ে বন্ধু মোকাদ্দেছ মোকা মন্ডলের বাড়ি ভুঞাপুরে নিয়ে যায়। সেখান থেকে মোকাদ্দেছ মোকা মন্ডল ভবিষ্যতে পারুলকে প্রতিষ্ঠিত করবে এবং কিছুদিন নাসির উদ্দিন @ বাবু এর কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে হবে এই আশ্বাস দিয়ে জয়পুরহাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি এলাকায় একটি নদীর পাশে নির্জন জায়গায় রাতের অন্ধকারে ভিকটিমকে তার বাবা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে মোকাদ্দেছ মোকা মন্ডলের সহযোগিতায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
আসামীর ১৬৪ এর বর্ণনা অনুসারে তারা ৩ জন রাতের অন্ধকারে নদীর পাড় দিয়ে হাঁটতে থাকে। মেয়ের ইতোপূর্বের কার্যকলাপের অপমান বোধ থেকে রাগে বাবা মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর মেয়ের ওড়না ২ টুকরা করে বাবা মেয়ের হাত এবং মোকাদ্দেছ মোকা মন্ডল পা বাঁধে। বাবার নিজের গামছা দিয়ে মেয়ের গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তারা ভিকটিমের লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে টাঙ্গাইলে চলে আসে। ০৪ আগষ্ট ২০১৫ খ্রিঃ মোঃ নাছির উদ্দিনের পরিবারের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলের বিজ্ঞ আদালতে পেনাল কোডের ৩৬৪/৩৪ ধারায় মামলা করে। (মামলা নং-পি-৩৭ কালিহাতি)।
কালিহাতি থানা পুলিশ তদন্ত করে প্রেম করে বিয়ে করার সংশ্লিষ্টতা পায়। কিন্তু ভিকটিমকে না পওয়ায় ঘটনাস্থল তাদের এখতিয়ার বহির্ভূত এলাকা (ঢাকায়) মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করে। বাদীর বারবার নারাজীর প্রেক্ষিতে ডিবি পুলিশ, টাঙ্গাইল/পিবিআই টাঙ্গাইল/সিআইডি টাঙ্গাইল তদন্ত করে একই রিপোর্ট প্রদান করে। সবশেষে আদালত জুডিশিয়াল তদন্ত করে রিপোর্ট দেয় যে, বাদী ঢাকার আদালতে মামলা করলে প্রতিকার পেতে পারে।
২৭ নভেম্বর ২০২২ ইং বাদী আঃ কুদ্দুছ খাঁ বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন আদালতে উপরোক্ত তদন্তের রেফারেন্সসহ নারী নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সং-০৩) এর ১১(ক) অর্থাৎ যৌতুকের জন্য মারপিট করে হত্যা মমালার আবেদন করে। ৩০ নভেম্বর ২০২২ বিজ্ঞ আদালত আশুলিয়া থানাকে মামলা রুজু এবং পিবিআই ঢাকা জেলাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। আশুলিয়া থানায় ১১ ডিসেম্বর ২০২২ মামলা দায়ের করা হলে পিবিআই, ঢাকা জেলা তদন্ত শুরু করে।
পিবিআই মোঃ নাছির উদ্দিনকে গ্রেফতারপূর্বক বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করে। ইতোমধ্যে বাদীকে ডাকা হয়। বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন যে, তিনি নিজেই তার মেয়েকে হত্যা করেছেন।তার দেয়া তথ্য যাচাই করার জন্য পিবিআই, ঢাকা জেলা জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানা থেকে ২০১৫ সালের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। পাঁচবিবি থানার করা মামলার আলামত, সুরতহালের বর্ণনা এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এর সাথে আঃ কুদ্দুছ খাঁ এর বর্ণনার মিল পাওয়া যায়। উক্ত পাঁচবিবি থানার মামলা নং-৫৬, তারিখ-২৩ জুলাই ২০১৫ ইং এর চুড়ান্ত রিপোর্ট সত্য দাখিল করা হয়েছিল।
অবশেষে ৫৪ ধারায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে বিজ্ঞ জুডিশিয়াল আদালত, ঢাকায় আঃ কুদ্দুছ খাঁ এর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়। জবানবন্দীতে তিনি হত্যাকান্ডে তার সংশ্লিষ্টতা এবং তার বন্ধু মোকাদ্দেছ মোকা মন্ডলের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন। আসামী মোকাদ্দেছ মোকা মন্ডলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শীঘ্রই তাকে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করা হবে।পুরো মামালার সার্বিক দিক নির্দেশনা দেন পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মীর মোঃ শাফিন মাহমুদ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন এসআই বিশ্বজিৎ বিশ্বাস।
চেয়ারম্যানঃ-আব্দুর রহিম খান,
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো : মাসুদ রানা
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ঢাকার বার্তা ২৪