নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বরিশালের একটি আলোচিত শ্রমিক সংগঠন
নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে ‘বিএনপি-
জামায়াত’ গোষ্ঠী একত্রিত হয়ে মাঠে
নেমেছে। ‘বরিশাল বিভাগীয় ট্যাংকলরি শ্রমিক
ইউনিয়ন’ নামক এই সংগঠনটির নেতৃত্ব
দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের হাতে থাকলেও
সিটি নির্বাচনে মেয়র সেরনিবাত সাদিক
আব্দুল্লাহ মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর বিএনপি-
জামায়াত সমর্থিতরা প্রতিষ্ঠানটি দখল নিতে
সু-পরিকল্পিত মিশন নিয়েছে। তাদের এই মিশন
বাস্তবায়ন করতে ওই সংগঠনের গুটি কয়েক
সদস্যকে সামনে রাখা হচ্ছে, যারা নিজেদের
বরিশাল সদর আসনের এমপি পানিসম্পদ
প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহিদ
ফারুক শামীম এবং নয়া সিটি মেয়র আবুল
খায়ের আব্দুল্লাহ’র অনুসারী দাবি করলেও
রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগে তাদের কোনো
পদ-পদবি নেই। উপরন্ত এই ষড়যন্ত্রে আবার যারা
শামিল আছে, তাদের অনেকেই বিএনপি-
জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় এবং তাদের
বিরুদ্ধে আছে একাধিক মাদক মামলাও।
জানা গেছে, সর্বশেষ সোমবার সংগঠনটির
সাধারণ সম্পাদক শেখ কামাল হোসেনের
পদত্যাগসহ ৫ দফা দাবিতে নগরীর অশ্বিনী কুমার
হলের সম্মুখে মানবন্ধন করা হয়েছে। সংগঠনের
সাধারণ সদস্য রিপন সিকদার ও ইমরানের
উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে ২০/২৫ জন
লোক অংশগ্রহণ করলেও তাদের অধিকাংশই
বিএনপি-জামায়াত এবং বাকিরা বহিরাগত।
এমনকি ব্যানার হাতে যারা রাস্তায় দাঁড়িয়েছে,
তাদের অনেকেই বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত।
উদাহরণস্বরুপ ব্যানারের সর্বডানে শেখ
কামালের ছবিসংবলিত প্লেকার্ড নিয়ে যে
যুবক দাঁড়িয়ে আছে, সে ১০ নং ওয়ার্ড
শ্রমিক দল নেতা। এবং তিনি কেডিসি
এলাকার বড় একজন মাদকবিক্রেতা। তার বিরুদ্ধে
অর্ধডজনের বেশি মাদক মামলা বরিশালের
আদালতে বিচারাধীন আছে। ত্রিশোর্ধ্ব এই
ব্যক্তি আলোচ্চ্য শ্রমিক সংগঠনের সদস্য নয়,
এমনকি সে কোনো ভাবে এতে তার সম্পৃক্ততাও
নেই। তার একজনের পরেই বাম পাশে আছে রিপন
সিকদার, সে সংগঠনের সদস্য এবং বিএনপির
রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এছাড়া মো. টিটু
নামের যে সদস্য মানববন্ধনে অংশ নিয়েছে, সেও
ওয়ার্ড শ্রমিক দল নেতা। চলতি বছরের ১ মে
শ্রমিক দিবসে কেডিসি কলোনীর সম্মুখে
তারা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক
রহমান এবং বিএনপি নেতা মজিবর রহমান
সরোয়ারের ছবির সাথে নিজেদের ছবি দিয়ে
ফেস্টুনও টাঙিয়েছিল।
অভিযোগ আছে, সংগঠনের সদস্য ইমরান
নামক যুবককে যে কী না নিজেকে প্রতিমন্ত্রী
অনুসারী দাবি করে, তাকে সামনে রেখে মূলত
ওয়ার্ড বিএনপি-শ্রমিক দলের নেতাকর্মীরা
‘বরিশাল বিভাগীয় ট্যাংকলরি শ্রমিক
ইউনিয়ন’ দখল নিতে চাইছে। এর নেপথ্যে
আছে বিএনপির আরও কয়েক নেতা, যারা এখন
নিজেদের আওয়ামী লীগ পরিচয় দেয়, দিচ্ছে।
আওয়ামী লীগ তাড়িয়ে সংগঠনটিতে
বিএনপির আধিক্য বৃদ্ধিতে তাদের এই সূ²
পরিকল্পনা হয়তো বলার অপেক্ষা রাখে না।
একাধিক সূত্র জানায়, আলোচিত এই
সংগঠনের সভাপতি অসুস্থতাজনিত কারণে গত
জুন মাস থেকে ঘরমুখী হয়ে আছেন। তার পদে
সিনিয়র সহ-সভাপতি আনিছুর রহমানকে
স্থলাভিষিক্ত করা হলে বিএনপি-জামায়াত
সমর্থিত হট্টোগোল শুরু করে দেয়। এবং
সংগঠনের অর্থ আত্মসাতের খোড়া অজুহাত
তুলে শ্রমিক দল নেতা শামীমকে সভাপতির পদে
বসাতে সভাপতি/সম্পাদকসহ কার্যনির্বাহী
সদস্যদের ওপর চাপপ্রয়োগ করে। কিন্তু
কার্যনির্বাহী সদস্যরা সাফ জানিয়ে দেন,
সংগঠনের একটি গঠণতন্ত্র আছে, তা উপেক্ষা
করে কাউকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো অসম্ভব।
বিএনপি-জামায়াতের এই কৌশল ভেস্তে গেলে
সেই ইমরানকে সামনে রেখেই তারা এখন
সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে,
তুলেছে নেতাদের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ করার
মতো অভিযোগ।
এসব অভিযোগ সমূলে মিথ্যে এবং ভিত্তিহীন
দাবি করেছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক
শেখ মো. কামাল হোসেন। সিটি নির্বাচনে
নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন জানিয়ে
তিনি বলেন, সাত শতাধিক শ্রমিকের
সংগঠনটি নিয়ে ষড়যন্ত্রে বিএনপি-জামায়াত
সরব হয়েছে। তারা ২/৩ জন সদস্যকে সামনে
রেখে ফায়দা লুটতে চাইছে, তাদের কেউ কেউ
প্রতিমন্ত্রী-নতুন মেয়রের নামও ভাঙাচ্ছে।
একাধিক কার্যনির্বাহী সদস্য অভিযোগ
করেছেন, ইমরানসহ যারা সাধারণ সম্পাদক
কামালের পদত্যাগসহ ৫ দফা বাস্তবায়নে মাঠে
নেমেছে, তাদের সু-পরিকল্পিত একটি মিশন
আছে। বিষয়টি ইতিমধ্যে প্রতিমন্ত্রী এবং
নতুন মেয়রকে অবহিত করা হয়েছে। এবং তাদের
এটাও বোঝানো হয়েছে যে, সংগঠন ভাঙার
ষড়যন্ত্রে বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠী রয়েছে, যা
তারা উপলব্ধি করেছেন সমসাময়িক কর্মকান্ডে।
সদস্যরা অভিযোগ করেন, এমন একটা সময়ে
সুশৃঙ্খল সংগঠন নিয়ে বিএনপি-জামায়াত
ষড়যন্ত্র করছে, যখন জাতীয় সংসদ নির্বাচন
সন্নিকটে। এখন তাদের এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে
পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হবে সাংগঠনিকভাবে।
সংগঠনের টাকা লুটপাট অভিযোগের বিষয়ে
সদস্যরা বলেন, এখানে অর্থ লুটপাটের কোনো
সুযোগ নেই, শ্রমিকেরা চাঁদা দেয়, সেই
টাকা আবার তাদের কল্যাণে ব্যয় হয়।
উদাহরণস্বরুপ দেখানো হচ্ছে, শ্রমিক দল নেতা
মো. টিটুর ভাই মিলনকে। চিকিৎসা সহায়তা,
এমনকি মৃত্যুর পরে মিলনের পরিবারকে এককালীন
অর্থও দিয়েছে সংগঠনটি। এ রকমের ভাবে
প্রতিবছর অন্তত শতাধিক অসহায় ও বিপদগ্রস্ত
শ্রমিককে সহায়তা দেওয়া হয়। অথচ জাতীয়
সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে
বিএনপি-জামায়াত একত্রিত হয়ে সংগঠনটি
দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, নেপথ্যে থেকে
যার কলকাঠি নাড়ছে কেডিসি কলোনীর এক
বিএনপি নেতা।
অনুসন্ধানী সূত্রগুলো বলছে, আসন্ন জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসছে
এমন হুমকি দিচ্ছে, এমন নেতারা ‘বরিশাল
বিভাগীয় ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়ন’ দখল
করতে চাইছে। অথচ তারাই আবারও কথিত
প্রতিমন্ত্রী-নতুন মেয়র সমর্থিতদের সামনে
রেখে সংগঠনবিরোধী আন্দোলনে সরব হয়েছে।
এক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদক কামালের ভাষ্য হচ্ছে,
বিএনপি নেতাকর্মীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার
আগেই দখল সন্ত্রাস শুরু করতে চাইছে। এমনকি
স্বেচ্ছায় সংগঠনের নেতৃত্ব ছেড়ে না দিলে
খুন-জখমের হুমকির পাশাপাশি ১০ ওয়ার্ডস্থ
সংগঠনের মূল কার্যালয় দখলের কথা বলছে। কিন্তু
এতে মোটেও ভীত নন, জানিয়ে কামাল বলেন,
সংগঠনের একটি গঠনতন্ত্র আছে, সেটি
মেনে সকল কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এখানে
অনিয়ম বা দুর্নীতি করার কোনো সুযোগ
নেই।
৫/৭ জন যারা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
তুলছে, তাদের মধ্যে অনেকেরই সংগঠনে পদ
নেই, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকায়
তাদের কেউ কেউকে বহিস্কার করা হয়। আবার
কারও কারও চাকরি গেছে, সঠিকভাবে দায়িত্ব
পালন না করার অপরাধে। এখন তারা বিএনপি-
জামায়াতের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে
সংগঠনে লুটপাট চালাতে চাইছে। কিন্তু তাদের
এই মিশন আওয়ামী লীগের ক্ষমতার আমলে
বাস্তবায়ন সম্ভবপর নয়, জানিয়েছেন সভাপতি
আনিছুর রহমান।
শ্রমিক সংগঠনের শীর্ষ এই নেতা বলেন, তাদের
সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ নিতে চিহ্নিত মাদক
ব্যবসায়ীরাও এক কাতারে এসেছে, যা
প্রতীয়মাণ হয় সোমবারের ওই মানববন্ধনে।
কিন্তু গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে সংগঠনে কাউকে
নিয়ে আসার সুযোগ নেই জানিয়েছেন
আনিছুর রহমানও। বরং শিগগিরই ধুরন্ধর ব্যক্তি
বিশেষ অর্থাৎ বিএনপি জামায়াত কর্মীদের
বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’