নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
মালিকপক্ষের নেই মার্কেটের দোকান ও ছাদ ভাড়ার চুক্তি। ছিলনা ওই মার্কেটের কিছু অংশের ভাড়া নেয়ার লিখিত অনুমতিও। নিয়ম না মেনে চট্টগ্রামের জিইসি মোড় সেন্ট্রাল প্লাজার মাকের্টের বেশ কয়েকটি দোকান ও ছাদ দখল করেন কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য আরশেদুল আলম বাচ্চু। এসব দোকান ও ছাদ ভাড়া দিয়ে প্রতি বছর আয় করছেন অন্তত ৫ কোটি টাকা। সেই হিসেবে গত ৮ বছরে প্রায় ৪০ কোটি টাকা পকেটে ভরেছেন ওই নেতা।
আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে দখলকৃত ওই দোকানগুলোকে বানিয়েছিল টর্চার সেল। এটি ছিল বাচ্চুর চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের সেল। বাচ্চুর কথা মতো চাঁদা না দিলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের লোকজন দিয়ে ধরে এনে নির্যাতন চালানো হতো ওই সেলে।
গতকাল ৩০ নভেম্বর দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন সেন্ট্রাল প্লাজার মার্কেটের কিছু অংশের মালিকপক্ষের প্রতিনিধি মোস্তফা আলম কিশোর। তিনি ছাড়াও তার মালিকপক্ষের অন্তত দশজন সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে সেন্ট্রাল প্লাজা মার্কেটের তৃতীয় তলার ৩০১ (এ), ৩০২ (বি) ও ৩০৪ নম্বর দোকান সহ মার্কেটের সামনের অংশের উপরে ছাদের পুরো অংশ দখল করে নেয় সাবেক চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ও আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য আরশেদুল আলম বাচ্চু। দখলকৃত অংশের মালিক হলেন মোস্তফা আলম কিশোর সহ তার আত্মীয়স্বজন। দখলকৃত দোকানসমূহ ও ছাদের অংশ ভাড়া দিয়ে প্রতিবছরে আয় করছেন ৫ কোটি টাকা। সেই হিসেবে গত ৮ বছরে এসব অর্থের পরিমাণ দাড়িয়েছে ৪০ কোটি টাকা।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আরশাদুল আলম বাচ্চু পালিয়ে গেলে ৭ আগস্ট দখলকৃত ওই মার্কেটের তিনটি দোকান ও ছাদের অংশ দখল ফিরে পায়। পরবর্তীতে বাচ্চু তার দখলবাজি টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা নেন কিছু সুবিধাবাদি বিএনপি লোকজনের। তাদের ছত্রছায়ায় দখল করে রেখেছেন বাচ্চু।
সূত্র বলছে, আরশেদুল আলম বাচ্চু প্রায় ২৫ বছর আগে চট্টগ্রামের ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রসংসদের জিএস ছিলেন তিনি। গত এক যুগ আগে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। সর্বশেষ তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপকমিটির সদস্য হিসেবে স্থান পান আরশেদুল আলম বাচ্চু।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি বাচ্চুকে। গত সাড়ে ১৫ বছরে নামে-বেনামে অন্তত কয়েক শ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বাচ্চু। শুধু সম্পদের পাহাড় করেছেন তাই নয়, ছাত্রসংসদের নেতৃত্বে থাকায় কলেজ ও আশপাশে তার ‘ভয়ংকর’ দাপটে সবাই তটস্থ থাকত।
গত ৫ আগস্টের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্রহত্যা, চাঁদাবাজি, দখলবাজি সহ নানা অভিযোগ অন্তত ১৫ টি মামলা দায়ের হয়েছে আওয়ামী লীগের ওই নেতার বিরুদ্ধে। এরপর তিনি ভারতে পালিয়ে যান বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন। ভারতের গিয়ে ফেসবুকের অপ্রচার চালাচ্ছেন সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে। দেশের বিরুদ্ধে অপ্রচারের অংশ হিসেবে সেখানে সন্ত্রাসিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে জানা গেছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তফা আলম কিশোর বলেন, ‘গত শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ক্ষমতা অপব্যবহার করে আমাদের দোকানসমূহ ও ছাদ দখল করে নেন বাচ্চু ও তার সহযোগিরা। ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর আমি ও আর্মা আত্মীয়স্বজনরা গিয়ে আমাদের দোকানগুলো ও ছাদের অংশ দখলমুক্ত করি। বিষয়টি খবর পেয়ে বাচ্চু তার দখল বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা নেন বিএনপির কিছু সুবিধাবাদী নেতা-কর্মির। তাদের ছত্রছায়ায় সেই আন্ডারগ্রান্ডে থেকে দখল বাণিজ্যের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বাচ্চু।’
‘আমরা ন্যায় বিচার চাই। প্রশাসনের নিকট সুষ্ঠ ও তদন্তের মাধ্যমে আমাদের সম্পত্তি ফিরে পাব সেই প্রত্যাশা করছি বলে জানান ভূক্তভোগী মোস্তফা আলম কিশোর।’
চেয়ারম্যানঃ-আব্দুর রহিম খান,
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো : মাসুদ রানা
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ঢাকার বার্তা ২৪