সকল প্রকার নিরাপত্তা আরো জোরদার করে দ্রুত নির্বাচন চায় বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী ও ভোটারা। তবে নির্বাচনের কেন্দ্র এখনো ভয় আতংক শংকা কাটেনি জনগণের মধ্যে।তার পরও প্রার্থীরা ও ভোটারা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অবাধ ভেজালমুক্ত নির্বাচন চায় সকলে। ফের নির্বাচন করতে গিয়ে যেন আর কারও প্রাণ না যায় সে দিকে সঠিক নজর দিতে নির্বাচন কমিশনসহ সরকারের উচ্চ মহলের প্রতি জোর দাবি জানান বাঘাইছড়ির সর্বস্তরের জনগণ। নির্বচনকে কেন্ত্র করে আর কারও মায়ের বুক খালী হউক তা আমরা দেখতে চাইনা।
গত ২৯ মে নির্বাচনটি বৈরি আবহাওয়ার কারনে অনুষ্ঠিত হয়নি এবং আইনশৃঙ্খলাজনিত কারনে গত ৯ জুনের নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।ফের কবে নির্বাচন হবে এনিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি প্রার্থীও ভোটারদের মধ্যে।
নির্বাচনকে ঘিরে ভোটার ও স্থানীয়দের দাবি স্থগিত হওয়া নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষণার ২-৩দিন আগেই সবকয়টি আঞ্চলিক সংগঠনের অস্ত্রধারীরা যেন ভোট কেন্দ্রের আশ-পাশে আসতে না পারে সে পরিবেশ সৃষ্টি করেই ভোট গ্রহনের দিন তারিখ ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশন।
তারা আরোও বলেন,ভোটের দিন অবশ্যই অবশ্যই প্রত্যেক কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, র্যাব,সেনাবাহিনী,পুলিশ ও বিজিবি মোতায়ন করা হয়। তাহলে সন্ত্রাসীরা আর অনৈতিক কার্যকলাপ বা কেন্দ্র দখল করতে পারবে না। স্থানীয় লোকজন,ভোটারও প্রার্থীসহ সবাই সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠিত হয় সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
রিটানিং অফিসার মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন,আপনারা অবশ্যই অবগত রয়েছেন যে, নির্বাচন কমিশন ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ তৃতীয় ধাপের নির্বাচন দেশের সব জায়গায় শেষ হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন কারনে বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।গত ২৯মে নির্বাচনের দিন তারিখ দিয়েও বৈরি আবহাওয়ার কারনে নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। ফের গত ৯জুন নির্বাচনের দিন তারিখ ঠিক করলে আইনশৃঙ্খলা অবনতি জনিত কারনে ৮জুন নির্বাচন স্থগিত করে দেন নির্বাচন কমিশন। যেহেতু বাঘাইছড়ি প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকা তাই কমিশন হয়তো সময় সুযোগ করে নির্বাচন দিবে।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিবিদ,বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মারিশ্যা ইউনিয়ন পরিষদ (সাবেক) চেয়ারম্যান আজিজ বলেন,পার্বত্য অঞ্চল বাঘাইছড়ি উপজেলাতে ৪টি অস্ত্রধারী আঞ্চলিক সংগঠন রয়েছে যারা নির্বাচনে তাদের প্রভাব বিস্তার করতে চায়।বিভিন্ন এলাকায় শুনা গেছে যে,তারা কেন্দ্র দখল করতে চেয়েছে যেটা কখনোই কাম্য নয়। আমার মতে সরকার যদি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চায় তাহলে কেন্দ্রের আশে-পাশে এই দলগুলোর কোনটির উপস্থিতি থাকতে দেওয়া যাবেনা। বাঘাইছড়িবাসী একটি অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। ভেজালমুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে যে আসুক না কেন আমাদের কোন আপত্তি নাই।
উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা সুভাস কুসুম চাকমা জানান,আমি সহ আমরা সকলে চাই নির্বাচনটা সুষ্ঠু-সুন্দর ভাবে হউক। কিন্তু হতাশার বিষয় এই যে দুই-দুইবার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দিয়েও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল না এটা আমাদের সকলের জন্য দূর্ভাগ্য। তাই আমরা মনে করি অতিসত্বর নির্বাচনটা হয়ে গেলে আমরা গাঁ ছেড়ে বাঁচি।
বাঘাইছড়ি প্রেস ক্লাবের সভাপতি দিলীপ কুমার দাস বলেন,আমরা চাই জনগণের গ্রহণ যোগ্য নির্বাচন। আমরা চাই এই নির্বাচনকে ঘিরে অত্র এলাকায় যে সন্ত্রাসী বাহিনী আছে তাদের যেনো কোন তৎপরতা যাতে না থাকে। তারাও যেনো সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্টানে সরকারকে সহযোগিতা করে। পাশাপাশি বার বার ভোট গ্রহণ বন্ধ হওয়ায় জনগণ ভূল বুঝতেছে এবং তাদের ভোট প্রদান প্রবনতা কমে যাচ্ছে। সেই সাথে বিষয়টি আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে। আর এভাবে চলতে থাকলে ভোটাররাও ভোট দিতে যাবে না সন্ত্রাসীদের ভয়ে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন আল মামুন বলেন, বর্তমানে উপজেলাবাসী যারা রয়েছেন তারা একটু আতঙ্কের মধ্যে আছেন আসলে ভবিষ্যৎ এ উপজেলা নির্বাচন হবে কিনা? দুই দুইবার নির্বাচন তফসিল ঘোষণা বিফলে যাওয়ায় আদৌ বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা নিয়ে সন্ধিক্ষণের মধ্যে রয়েছে সাধারণ জনগণ। তাই আমি আশা করব বাঘাইছড়ি উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে যেহেতু স্বাভাবিক রয়েছে সেহেতু নির্বাচন কমিশন ও সরকার যদি এ উপজেলা নির্বাচন দেয় তাহলে হয়তো বা এ এলাকায় আবার শান্তি ফিরে আসবে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীরা,ভোটারা ও সাধারণ মানুষের একটাই দাবি তারা সবাই প্রভাবমুক্ত, দখলমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত এবং ভয়ভীতিমুক্ত নির্বাচন চায়। নির্বাচনে জাতীয় বা লোকাল রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপ চায় না তারা। এসব পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে এনে যদি নির্বাচন কমিশন বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দেয় তাহলে কোন ধরনের সহিংসতা না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
প্রসংগত- উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ১৮জুন ২০২৪ বাঘাইহাটে সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ গেল নিরীহ বাস শ্রমিক মোঃ নাঈমের। ২০১৯ সালের ১৮মার্চ তথা ৫ম বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহন শেষ করে সাজেক থেকে ফের পথে বাঘাইছড়ি-দীঘিনালা সড়কের নয়কিলো এলাকায় একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে নির্বাচনী কর্মকর্তাও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর বহনকারী চাঁদের গাড়িগুলো লক্ষ করে ব্রাশ ফায়ার করে এতে ৭জন মারা যায় এবং ৩৩ জন আহত হয়।
চেয়ারম্যানঃ-আব্দুর রহিম খান,
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো : মাসুদ রানা
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ঢাকার বার্তা ২৪