সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ চট্টগ্রাম বন্দর নগরীতে দিনের পর দিন তেলের ভাউচারে অভিনব কায়দায় মূল্যবান রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল পেট্রোলিয়াম কোম্পানিগুলোর অসাধু কর্মকর্তা ও তেল চোর চক্রের যোগসাজশে অবৈধ তেল বৈধ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে কথিত শ্রমিকলীগ নেতা মো. শাহজাহান কালুরঘাট শাখার সোনালী ব্যাংকের কয়েকটি একাউন্ট থেকে যথারীতি রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানী তেল বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের নামে পে-অর্ডার করে,পরবর্তী ধাপে সেই পে-অর্ডার নিয়ে চক্রের বাহক চলে যায় বিভিন্ন পেট্রোলিয়াম কোম্পানিতে। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করা ট্যাংকার অথবা খালি ব্যারেল বোঝাই ট্রাক পে- অর্ডারের কপি ভাউচার নিয়েই সিরিয়াল ভেঙ্গে দ্রুত তেল ভর্তি করে বের হয়ে যায় পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশ্য।
এরপর ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক বোঝাই করা ট্যাংকার অথবা ব্যারেল ভর্তি গাড়িগুলো চলে আসে বেসরকারী রিফাইনারিতে। সেখান থেকে সরকারের বেঁধে দেওয়া পাইকারি দরের চেয়ে কম দামে সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধভাবে গাড়িগুলোতে লোড দেয়া হয়।
এই গাড়িগুলো এই ভাউচার দেখিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে তেল নিয়ে চলে যায় সূদুর নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন গন্তব্যে।
বেসরকারি রিফাইনারিগুলো তেল পরিশোধের পর সরাসরি রাষ্ট্রায়ত্ব পেট্রোলিয়ামে সবটুকু তেল পাঠানোর কথা থাকলেও বেসরকারী রিফাইনারিগুলোর কর্তাদের যোগসাজসের কারণে দিনেরপর দিন হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
জানাযায়, গত বছর কাইয়ুম নামক তেল চোরাকারবারির সাথে জড়িত এক সদস্যকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এই ভাউচারসহ আটক করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। জিজ্ঞাসাবাদে কাইয়ুমের দেওয়া তথ্য মতে ঢাকার কাকরাইল থেকে গা ঢাকা দেওয়া অবস্থায় আটক হয় আরো এক চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের সদস্য তারেক।
এর পর থেকে বেশ কয়েকদিন গা-ঢাকা দিয়েছিল এই চক্রের মূল সদস্যরা। তবে, বর্তমানে আগেই মতোই দেদারসে এই সিন্ডিকেটটি ব্যবসা করে যাচ্ছে। যার সাথে পেট্রোলিয়াম কোম্পানিগুলোর কর্তা ব্যাক্তিদেরও জড়িতে থাকার তথ্য উঠে এসেছে।
সিন্ডিকেটের মূলহোতা কথিত শ্রমিকলীগ নেতা মো. শাহজাহানের পরিবারের সদস্যদের নামের একাধিক একাউন্ট থেকে নিয়মিত লেনদেন হয় চক্রের অন্য সদস্যদের ব্যাংক একাউন্টে। রাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিতে তিনি একাধিক প্রতিষ্ঠান চালু করে ট্রেড লাইসেন্স করেছেন কালো টাকা সাদা করতে।প্রতারণা, ভূমি দখলের উদ্দেশ্য হামলাসহ তার বিরুদ্ধে চান্দগাঁও, খুলসী থানায় একাধিক মামলার অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। এদিকে তার এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব লোপাটের কাজে সহযোগী হিসেবে উঠে আসে তারেক, মনিরসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতার নাম। যারা সরাসরি এই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত।
মূলত এই সিন্ডিকেটটি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সরবরাহকারী পেট্রোলিয়াম কোম্পানির সাথে জড়িত অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে মিলে ভাউচার জালিয়াতি করে দিনের পর দিন জ্বালানী তেল চুরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। ভাউচার থাকার কারনে প্রশাসনের সদস্যরাও তাদের এই কারসাজি ধরতে পারছে না।
মূলহোতা শাহজাহানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বৈধ উপায়ে তেলের ব্যবসা করি। আমার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক ভাবে আমাকে হেয় করার উদ্দেশ্য এই মিথ্যা তথ্য দিয়ে একের পর এক নিউজ করাচ্ছে।
সূত্র জানায়, সিন্ডিকেটের হয়ে চন্দনাইশসহ আশপাশে এই তেল বিক্রির কাজ করে বিএনপির নেতা সাগর, মুন্না, শিবলু।নগরীতে কাজ করে তারেক, মনির, কাইয়ুম, সাইফুলসহ স্থানীয় বিএনপির ও শিবিরের নেতারা।
স্থানীয় এক এমপির একটি গ্রুপও সরাসরি এই কারবারের হয়ে কাজ করে বলে তথ্য উঠে এসেছে।