আইআইইউসি’র সাবেক ট্রেজারার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির কর্তৃক সার্টিফিকেট প্রতারণা ও জালিয়াতি, নৈতিক পদস্খলন, স্বেচ্ছাচারিতা, অবাধ্যতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, আর্থিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন করার মত অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
৬৮তম ডিসিপ্লিন কমিটির (সূত্র: ক) সুপারিশের আলোকে ২৪৯ তম সিন্ডিকেট সভায় (সূত্র: খ) ঐক্যমতের ভিত্তিতে হুমায়ুনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ১৪ জুলাই ২০২৪ তারিখে ২৯৫০৯.ব্যক্তিগত (০৬)২০২৪ স্মারকে কারণ দর্শানোর জন্য পত্র জারি করে। বিষয়টি চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের আদেশক্রমে হুমায়ুনকে চাকুরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় বলে জানান রেজিস্ট্রার আ. ফ. ম. আখতারুজ্জামান কায়সার।
০১ মার্চ ২০২১ তারিখে জামাত নেতাদের দ্বারা গঠিত ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে দিয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভীকে চেয়ারম্যান করে আইআইইউসি’র নতুন ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে সরকার। নবগঠিত ট্রাস্টি বোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ট্রেজারার নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরকে। সূত্রে প্রকাশ, আইআইইউসি’র সাবেক ট্রাস্ট চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাবেক এমপি আ.ন.ম শামসুল ইসলামের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত, চট্টগ্রাম কলেজে ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিবির নেতা, প্রবাহ, ইনডেক্সসহ শিবির পরিচালিত বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের পরিচালক হুমায়ুন কবিরকে আওয়ামী লীগ ঘরানার ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক আইআইইউসি’র ট্রেজারার নিয়োগদান দেখে সাবেক ট্রাস্টি সদস্যবৃন্দ ও স্থানীয় জামাত-শিবিরের চোখ কপালে ওঠে। স্পষ্ট হয়ে যায়, সাবেক এমপি আ.ন.ম শামসুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ট্রাস্টি বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান গোপন নথিপত্র কার মাধ্যমে এতোদিন ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভীর হাতে পৌঁছে যায়। আওয়ামী লীগ ঘরানার ট্রাস্টি বোর্ডে একসময়ে শিবিরের মাস্টারমাইন্ড হুমায়ুনকে দেখে তার সমসাময়িক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এভাবে জামাত-শিবিরের খোলস পাল্টে রাতিরাতি আওয়ামী লীগ বনে যাওয়া হুমায়ুনকে নবগঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের সুপারিশক্রমে ১ আগস্ট ২০২১ রাষ্ট্রপতি ও আচার্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ৩৩ (১) ধারা অনুযায়ী যোগদানের তারিখ থেকে চার বছরের জন্য হুমায়ুন কবিরকে নিয়োগ প্রদান করেন। শুরু হয় বহুরূপী হুমায়ূনের নতুন পথচলা। সার্টিফিকেট প্রতারণা ও জালিয়াতি, নৈতিক পদস্খলন, স্বেচ্ছাচারিতা, অবাধ্যতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, আর্থিক অনিয়ম, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে হয়রানির মধ্য দিয়ে দিনদিন ভারি করে তুলে তার আমলনামা। চাটুকারিতা, বহুরূপী আচরণ দিয়ে বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভীর বেশ আস্থাও অর্জন করেছিলেন ড. হুমায়ুন। এই আস্থাকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে হুমায়ুন ধরাকে সরা জ্ঞান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কর্মকর্তা হিসেবে আবির্ভুত হয়ে কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে জড়িয়ে পড়েন নানান আর্থিক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতায়। ভুয়া টেন্ডার দেখিয়ে হাতিয়ে নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি কোটি টাকা। ক্রয় কমিটিকে পাশ কাটিয়ে নিজেই কম্পিউটার থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামগ্রী নিজেই খরিদ করতে শুরু করে। নিম্নমানের সরঞ্জাম ও মালামাল খরিদ নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন ওঠলে ট্রাস্টের সদস্য রিজিয়া রেজা নদভীকে প্রধান করে পারচেজ কমিটি গঠন করা হয়। হুমায়ুনের হয়রানি থেকে বাদ যায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক থেকে জুনিয়র শিক্ষক, পদস্থ কর্মকর্তা থেকে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। এমনকি ভিসি,প্রো-ভিসির ফাইল পর্যন্ত আটকিয়ে রেখে হয়রানি করার অভিযোগও রয়েছে হুমায়ুনের বিরুদ্ধে। তাকে ডিঙিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে পৌঁছা অনেকটা বন্ধ করে রেখেছিলেন ধূর্ত হুমায়ুন। এরপরও কেহ গেলে তাকে কোন না কোনভাবে হয়রানিতে ফেলতেন ড. হুমায়ুন। হুমায়ুনের হয়রানির শিকার ভুক্তভোগীরা লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দিলেও ট্রাস্ট চেয়ারম্যান প্রথম প্রথম গুরুত্ব না দিলেও পরবর্তীতে আমলে নেন। কিন্তু ততোদিনে হুমায়ুনের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছারিতা ও জালিয়াতির আমলনামা বিরাট ভলিয়ামে পরিণত হয়। শুরু হয় হুমায়ুননামার অনুসন্ধান। তদন্তে বেরিয়ে আসে একের পর এক থলের বিড়াল। শুধু তাই নয়, কিছু কিছু বিষয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের সাথে মতের অমিল হওয়ায় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ফাঁসাতে ও হয়রানিতে ফেলতে বিশ্ববিদ্যালয় মজুরি কমিশন, দুর্নীতি দমন ব্যুরো, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বেনামে অভিযোগ দায়ের ও তথ্য পাচার করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার করায়। এভাবে ধূর্ত ও বহুরূপী হুমায়ূনের আসল স্বরূপ উম্মোচিত হলে ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভীর নেতৃত্বাধীন ট্রাস্টি বোর্ড নড়েচড়ে বসে। এমতাবস্থায়, তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে তিনি গত ২৭ এপ্রিল ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারন দেখিয়ে ট্রেজারের পদ হতে পদত্যাগ করেন হুমায়ুন। প্রাথমিক তদন্তে হুমায়ুনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ সন্দেহাতীত প্রমাণিত হওয়ায় গত ১৪ জুলাই তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়। ড. হুমায়ুনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে তার মতামত চাওয়ার জন্য তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়।