জসিম উদ্দিনঃ আধুনিক বিশ্বে প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের ফলে মানুষ প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আমাদের দৈনন্দিন সব কাজই কোনো না কোনোভাবে তথ্য প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। এখন মানুষ খুব সহজে সেকেন্ডের মধ্যে বিশ্বের যে কোন জায়গায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত হতে পারছে।মূহুর্তের মধ্যে তার ডিজিটাল ডিভাইসে রাখা ব্যক্তিগত তথ্য, ফাইল, ব্যাংক এ্যাকাউন্ট, ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াট্সএপ, টেলিগ্রাম ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্য ব্যবহার করতে পারছে।
এতে করে মানুষ যেমন সুবিধা ভোগ করছে, তেমনি কিছু ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে। সাইবার হ্যাকার ও অপরাধীরা এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ যেমন- সাইবার প্রতারণা, অর্থ লোপাট, সাইবার এ্যাটাক, পর্নোগ্রাফি, হ্যাকিং, ফিশিং, ম্যালওয়্যার, র্যা নসমওয়্যার, ডেটা ব্রিচ, সাইবার বুলিংসহ নানা ধরণের অপরাধ করে যাচ্ছে। এ সকল অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে সিআইডি, বাংলাদেশ পুলিশ অপরাধীদের সনাক্ত পূর্বক আইনের আওতায় আনাসহ তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তারাই ধারাবাহিকতায় আজ ২০ মে ২০২৪ ইং সিআইডি সদর দপ্তরে Securing Digital Assets: Malware Analysis, Hacking Techniques and Crypto Protection শীর্ষক এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। উক্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বিপিএম, পিপিএম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিআইডি প্রধান বলেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি, বিট কয়েনসহ অন্যান্য ডিজিটাল কারেন্সির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার রোধে তদন্তকারী ও তদন্ত তদারকী কর্মকর্তাদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের বিকল্প নাই।তিনি আরো বলেন, দেশ ও বিদেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে Digital Assets সংক্রান্ত মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে আরো দক্ষ করে গড়ে তুলা হবে।
কর্মশালায় মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ, বিশেষ পুলিশ সুপার ,সাইবার ইন্টেলিজেন্স এন্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ( অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) এবং keynote Speaker হিসেবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনাব মোহাম্মদ শিবলী কায়সার অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার, সাইবার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত)।
এছাড়া অন্যান্য বক্তারা হলেন মোঃ মেহেদী হাসান, সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিস্ট ,ক্রিয়েটিভ আইটি ইন্সটিটিউট, মোঃ হাসান শাহরিয়ার ফাহিম CCISO, PMP, Octagram Limited ও মোঃ আতিকুর রহমান, উপ- পুলিশ পরিদর্শক, সাইবার পুলিশ সেন্টার।কর্মশালায় Digital Assets এর নিরাপত্তা সংক্রান্তে Malware Analysis, Hacking Techniques and ও Crypto Protection বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। উক্ত কর্মশালায় ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, বিশেষ পুলিশ সুপারসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বনতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রশিক্ষনার্থী হিসেবে ১০০ জন তদন্ত তদারকী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা অংশ গ্রহন করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সমাপনি বক্তব্য প্রদান করেন মোঃ মাইনুল হাসান, পিপিএম-সেবা, এনডিসি, ডিআইজি (এইচআরএম ও ঢাকা মেট্রো), সিআইডি।
কর্মশালা শেষে সাইবার নিরাপত্তায় নিম্নবর্নীত করণীয় সম্পকে পরামর্শ প্রদান করা হয়।সফ্টওয়্যার এবং অপারেটিং সিস্টেম সবসময় আপডেট রাখুন।অ্যান্টি-ভাইরাস সফ্টওয়্যার ব্যাবহার করুন ।সোস্যাল মিডিয়া, ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ সব জায়গায় শক্তিশালি পাসওয়ার্ড ব্যাবহার করুন।অনলাইন বা সোস্যাল মিডিয়ায় আপনার সেনসিটিভ তথ্য শেয়ার থেকে বিরত থাকুন।কখনোই স্প্যাম ইমেইলের অ্যাটাচমেন্ট খুলবেন না।
স্প্যাম মেইলের কোনো লিঙ্ক এবং অবিশ্বস্ত কোনো ওয়েবসাইটের লিঙ্কে ক্লিক করবেন না।সম্পূর্ণ নিরাপদ মনে না হলে কখনোই কোথাও বা কাউকে ব্যক্তিগত তথ্য দিবেন না।আপনি যে ওয়েবসাইটগুলিতে ভিজিট করেন সেই URL গুলো নিয়ে সতর্ক থাকবেন।আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর উপর নজর রাখুন।আপনার নিকট আত্মিয় ও পরিবারের সদস্যদের ইন্টারনেট ব্যাবহারের ঝুকি সম্পর্কে জানান এবং তা থেকে পরিত্রাণের উপায়গুলি শেয়ার করুন।
পাবলিক নেটওয়ার্ক (ফ্রি ওয়াইফাই) ব্যাবহার থেকে বিরত থাকুন।নিজের ব্যাতিত অন্যের ডিভাইসে কোনো অ্যাকাউন্ট যেমন ফেসবুক, ইমো, ইনস্ট্রাগ্রাম, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লগইন করলে ব্যাবহার শেষে অবশ্যই লগআউট করবেন।এসএমএস এর মাধ্যমে যদি পরিচিত কারো বিপদের কথা বলে টাকা চায় তাহলে টাকা দেবার আগে অবশ্যই যাচাই করে নিবেন।আপনার ডিভাইসে অজানা কেউ লগইন আছে কিনা তা যাচাই করুন।থার্ড পার্টি অ্যাপস ব্যবহারে সতর্ক থাকুন।পরিবর্তীত আইইএমআই মোবাইল সেট ব্যবহার করা হতে বিরত থাকুন।টু-ফ্যাক্টর অথেনটিক পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।অপরিচত কাউকে পিন কোড/পাসওয়ার্ড শেয়ার করবেন না।