নিজস্ব প্রতিবেদকঃ জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য, বর্তমান বেগম রওশনপন্থী নেতা কাজী মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে চাকরির প্রলোভনে এক গৃহবধুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে নির্যাতিতার ছেলেকে অপহরণের অভিযোগও উঠেছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহয়তায় নির্যাতিতা তার ছেলেকে উদ্ধার করেছেন। তবুও পক্ষাগ্রস্থ স্বামী ও পরিবার নিয়ে অভিযুক্ত মামুনের ভয়ে নিরাপত্তাহীনতায় দিনযাপন করছেন তিনি। ক্ষমতাবান মামুনকে দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ওই গৃহবধু।
শনিবার (২২ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর ক্র্যাব মিলনায়তনে নির্যাতিত গৃহবধু এক সংবাদ সম্মেলন করে এ সব অভিযোগ করেছেন।
কিভাবে জাপা নেতা কাজী মামুনের সঙ্গে পরিচয় ও ধর্ষণের স্বীকার হলেন তা বর্ণনা করতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অঝোরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ওই গৃহবধু। তিনি জানান, চাকুরির আশ্বাস দিয়ে কাজী মামুন আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশের নাকের ডগায় আসামি মামুন ঘুরে বেড়াচ্ছে, অন্যদিকে পক্ষাগ্রস্থ স্বামীকে নিয়ে অসুস্থ শরীরে অসহায় অবস্থায় আসামি মামুনের হুমকির মুখে দিন যাপন করছি। এর আগে সে আমার ছেলেকে অপহরণ করে মামলা প্রত্যাহারের চাপ দেয়। র্যাবকে জানানোর পর ছেলেকে পাওয়া গেলেও ধর্ষণ ও অপহরণের ঘটনায় মামুনকে ধরছে না পুলিশ।
নির্যাতিতা গৃহবধু আহাজারি করে বলেন, ‘কখন একজন নারী লজ্জা শরম ফেলে সংবাদ সম্মেলন করে মানুষের সামনে বলেন, আমি ধর্ষণের শিকার। যখন তার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। আমার ইজ্জত শেষ হয়ে গেছে। আমি ও আমার পরিবারের জীবন এখন হুমকির মুখে। কাজী মামুনের কাছ থেকে আমি ও আমার পরিবার বাচতে চাই। আমি ন্যায় বিচার চাই। তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
লালবাগ থানার ওই নারী বলেন, ‘আমার স্বামী পক্ষাঘাতগ্রস্থ এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ বিধায় আমার সংসারের সার্বিক খরচের যোগানের তাগিদে আমি এক্সট্রেঞ্জা ফার্মাসিটিকাল নামীয় একটি ঔষধ কোম্পানির মালিক মামুনুর রশিদের নিকট চাকুরির জন্য আবেদন করি। তাহার সহিত আমার হাইকোর্ট মাজারে পরিচয় হয় এবং পরিচয়ের এক পর্যায়ে আমার আর্থিক অভাব অনটনের কথা শুনে আমাকে চাকুরির আশ্বাস প্রদান করে। আশ্বাসের প্রেক্ষিতে গত ৪ জুলাই দুপুরে আমি তার সেগুনবাগিচা জে কে টাওয়ার ৪র্থ তলায় যাই। অফিসে পৌঁছানোর পর মামুনুর রশিদ আমাকে অফিসে তার ব্যক্তিগত রুমে ডেকে নেয় এবং বিভিন্ন কথার প্রসঙ্গে আমাকে বলে ‘কিছু পেতে হলে তো কিছু দিতে হবে’। আমি তাকে বলি যে, আপনাকে দেয়ার মত আমার কিছুই নাই। তখন মামুনুর রশিদ আমাকে তার সাথে শারিরিকভাবে মিলিত হবার কুপ্রস্তাব দেয়। প্রস্তাব শুনেই আমি তার রুম থেকে বের হবার চেষ্টা করলে সে আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে উপর্যুপরি কিল ঘুষি মারতে থাকে এবং এক পর্যায়ে আমাকে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে।
তিনি আরও জানান, ঐ ঘটনায় আমি হতবিহ্বল ও বিধ্বস্ত হয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট রমনা থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক অভিযোগ গ্রহন করে, উপরোক্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায় এবং আমাকে ঢাকা মেডিকেলের ওসিসিতে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। ঢাকা মেডিকেলের ওসিসি কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষনিক পরীক্ষা করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন এবং মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ৪/৫ দিন হাসপাতালে অবস্থান করা লাগবে বলে জানালে আমি আমার অসুস্থ স্বামীর কথা বিবেচনা করিয়া প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহন শেষে হাসপাতাল ত্যাগ করি।
গৃহবধু বলেন, ‘এই ঘটনায় লম্পট, দুশ্চরিত্র ও ধর্ষক মামুনুর রশিদ ক্ষিপ্ত হইয়া উঠে এবং ধর্ষনের ঘটনার তিন দিন পরে গত ৭ জুলাই মাঝরাতে আমার ছেলে তাকির মোহাম্মদ রেজা রুটি কেনার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলে তাকে অপহরণ করে মামুন সহ তার সহযোগিরা। একদিন ছেলেকে কোথাও খুঁজে না পেলে পরদিন আমার ছেলের ব্যবহৃত মোবাইল থেকে আমার জামাইয়ের মোবাইলে ফোন দিয়ে জানায় যে, তোমরা থানায় রুজুকৃত অভিযোগ উঠিয়ে নাও, না হলে আমার ছেলেকে মেরে ফেলা হবে, বলেও ফোনের সংযোগ বিছিন্ন হয়ে যায়।
তিনি জানান, ছেলে অপহরণের বিষয়টি স্থানীয় লালবাগ থানায় অবহিত করা হলে কর্তৃপক্ষ একটি জিডি গ্রহন করে। তারা আমার ছেলেকে সন্ধান করতে থাকে এবং আমাকে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন। আমি নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে নালিশি দরখাস্ত দায়ের করি। আদালত সন্তুষ্ট হইয়া আমার অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলাটি সংশ্লিষ্ট লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এফ আই আর হিসেবে গন্য করে নিয়মিত মামলা রুজু করার আদেশ দেন। আদালত থেকে আদেশ গ্রহন করে থানা কর্তৃপক্ষ আমাকে পুনরায় ওসিসিতে প্রেরণ করে এবং আমার সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ দ্রুত মেডিকেল পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। মেডিকেল পরীক্ষায় আমার ধর্ষনের আলামত পাওয়া যায়। এরপর গত ১১ জুলাই আমার ছেলের ফোন নাম্বার থেকে একটি ফোন কল আসে এবং অজ্ঞাত এক ব্যক্তি আমার দায়েরকৃত মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ প্রদান করে। আমার সন্তানকে খুজে পাইবার জন্য আমি ১৭ জুলাই র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১) এর নিকট একটি আবেদন করি। আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাকে জানায় যে, তাহারা আমার ছেলেকে উদ্ধারের নিমিত্তে বারংবার আসামীর বারিধারাস্থ বাসভবনে তল্লাশি চালাইলেও আমার ছেলেকে উদ্ধার করা যাচ্ছেনা।
এরপর গত ২০ জুলাই সন্ধায় ব্রাহ্মনবাড়িয়া থেকে এক ব্যক্তির মাধ্যমে আমি জানতে পারি যে, আমার ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় রাস্তায় পাওয়া গেছে, আমি তাৎক্ষনিক পুলিশকে জানালে তাদের সহায়তায় আমার সন্তানকে উদ্ধার করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার সন্তানকে আদালতে উপস্থাপনের পূর্ব পর্যন্ত আইনত অভিভাবক হিসেবে আমার জিম্মায় প্রদান করে। আমাকে ধর্ষনকারী মামুনুর রশিদের গ্রামের বাড়ি ও স্থায়ী ঠিকানা ব্রাহ্মনবাড়িয়া। তার নির্দেশে আমার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন গৃহবধু।
তিনি বলেন, অভিযুক্ত মামুনুর রশিদকে দ্রুত গ্রেফতার করা না হলে সে যেকোন সময় সে দেশের বাইরে পালিয়ে যাবে। তার ভাড়াটে বাহিনীর মাধ্যমে আমার ও আমার অসহায় পরিবারের ক্ষতি সাধন করতে পারে, এমনকি আমাকে খুন করতে পারে।
অভিযুক্ত জাতীয় পার্টির নেতা কাজী মামুনুর রশিদ বলেন, ধর্ষণ ও অপহরণের ঘটনাটি মিথ্যা। এ রকম কোন ঘটনা ঘটেনি। পুলিশই বলতে পারবে আমি ধর্ষক কিনা!