নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজধানীর সবচেয়ে বৃহত্তম পাইকারি আড়ত কাওরান বাজার।গত ৫ আগষ্ট ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর আবার ও একই কায়দায় চাঁদাবাজদের দৌরত্বে অতিষ্ঠ সাধারন ব্যবসায়ীরা।বিএনপির কেদ্রীয় নেতাকর্মীদের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা উপায়ে দিনভর চলে হরদম চাঁদাবাজি। আর এ চাঁদাবাজি অর্থ মাস শেষে দাঁড়ায় কয়েক কোটি টাকার ঘরে। শুধু তাই নয়, টাকার বিনিময়ে সিটি করপোরেশনের পার্কিং স্পটগুলোও এখন নিয়ন্ত্রণ করছে ওই চক্র। সেখান থেকেও মাস শেষে আদায় হচ্ছে কোটি টাকা।
কাওরান বাজারে প্রতিদিন অন্তত ৫ হাজার পাইকারের আনাগোনা রয়েছে। পণ্য কেনা, পরিবহনে লোড করা, ভ্যান গাড়িতে পণ্য নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই গুনতে নির্দিষ্ট পরিমাণের চাঁদা।শুধু তাই নয়, পণ্য কিনে ট্রাকে লোড করার জন্য একটি স্থানে সেগুলো রাখার জন্য চাঁদা দিতে হয়। চাঁদাবাজদের দাপটে ব্যবসায়ীরা অস্থির হলেও তাদের কাছে জিম্মি বলে নিরবে চাঁদা দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে গত ৫ অক্টোবর ২৪ ইং ভুক্তভোগি মোঃ শহিদুল্লাহ (৬২) তেজগাঁও থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন।মামলায় তিনি উল্লেখ করেন গত ২৫ ফেব্রয়ারি ২০১০ সালে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক অনুমোদিত কাওরানবাজার ঢাকা এর মালিকানাধীন শিশুপার্ক আড়ৎ মার্কেট সংলগ্ন পূর্ব পাশে ২নং কাঁচামালের দোকান অনামে প্রকৃত মালিক হইয়া আমি ভোগ দখল করিয়া আসিতেছি।
গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ ইং শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ১ নং আসামী ফরাজুল ইসলাম ফরহাদ,মিন্টু অরফে চশমা মিন্টু,ফুড মিন্টু,আব্দুল জলিল,ভাগিনা ফারুকসহ আরো অনেকে আমার কাঁচা মালের আড়তের দোকান ভোগ দখলের পায়তার করিয়া আসিতেছে এবং আমার কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে।
চাঁদার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে চাঁদাবাজরা শহীদুল্লাহ’কে পরে দেখে নিবে মর্মে হুমকি দিয়ে আসতেছিল।গত ৫ আগস্ট ২০২৪ ইং দুপুর অনুমান ১২.৩০ ঘটিকার সময়ে তেজগাঁও থানাধীন কাওরানবাজারস্থ শিশুপার্ক আড়ৎ মার্কেট সংলগ্ন পূর্ব পাশে ২নং কাঁচামালের দোকানে অবস্থানকালে তার দোকানের সামনে এসে তার কাছে পূর্বের দাবিকৃত পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে চাঁদাবাজরা।
শহীদুল্লাহ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে ২৬ নং ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি ভাগিনা ফারুক,ফরাজুল ইসলাম ফরহাদ,চশমা মিন্টু,ফুড মিন্টু,আব্দুল জলিলসহ আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
ভুক্তভোগি শহীদুল্লাহ আরো বলেন,স্বৈরাচার শেখ হাসিনা থাকাকালীন সময়ে আমি জামাতের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম বিদায় আমাকে প্রতিনিয়ত যুবলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে অনেক নির্যাতন নিপিড়নের শিকার হয়েছি বর্তমানে এসে আবার চাঁদাবাজদের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি।
সরেজমিনে কাওরান বাজার ঘুরে ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে এসেছে চাঁদাবাজির চাঞ্চল্যকর তথ্য। তারা বলেন আগে আওয়ামীলীগ যুবলীগের ক্যাডাররা চাঁদা নিতো এখন বিএনপির বড় নেতাক্রমীদের নাম ব্যবহার করে চাঁদা নেয় অনেকে।সুধু নাম ও সাইনবোর্ড পরিবর্তন হয়েছে ।বর্তমানে হয়রানির মাত্রা বেড়েছে দ্বিগুন,একই নাম ব্যবহার করে কয়েক দফা চাঁদা নিতে আসে অনেকে তাই আমরা দিশেহারা।
গোপন সূত্রে খবর নিয়ে জানা যায় প্রগতি টাওয়ার ও পার্ক মার্কেট ও দুই নং সুপার মার্কেটের পশ্চিম পাশে ভাগিনা ফারুক ও তার সহযোগি ফরাজুল আন্ডারে পাঁচটি ঘর দখল আছে,প্রতিদিন ঘর গুলো থেকে ভাড়া নেয় ৩ হাজার থেকে ৩৫শ টাকা।ভাড়া গুলো প্রতিদিন তুলেন ভাগিনা ফারুক ও তার সহযোগিরা।তৎকালীন আওয়ামী সন্ত্রাসী লোকমান সাথে গভীর সক্ষতা ছিলো ভাগিনা ফারুকের ।
নাম প্রকাশে অনুচ্ছুক ২৬ নং ওয়ার্ড যুবদলের একাধীক নেতা বলেন,ভাগিনা ফারুক,ফুড মিন্টু,জলিল ও চশমা মিন্টু মহানগর যুবদলের এক প্রভাবশালী নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে কাওরানবাজার এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন ও দলের বদনাম করছেন।
২৬ নং ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক ফুড মিন্টু শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্ছি হান্নারের সহযোগি যা অনেকের জানা,সুধু তাই নয় শ্রমিকলীগের এক প্রভাবশালী নেতার সাথে ও ছিলো তার গভীর সক্ষতা। বর্তমানে ফুড মিন্টুর দখলে
ইত্তেফাক এর গলিতে চারটি ঘর,তার মধ্য একটি ঘর দখল করেছেন আওয়ামীলীগ নেতা জাফরের।সুধু তাই নয় সুরমা হোটেলের পশ্চিম পাশে সিটি কর্পোরেশনের জায়গা দখল করে রাতে আড়ত বসিয়ে সারাদেশ থেকে আসা কাঁচামালের প্রতিটি গাড়ি প্রতি নেন ২৫শত থেকে তিন হাজার টাকা করে নেন ফুড মিন্টু ও তার সহযোগিরা।অভিযোগ আছে ২ নং পার্ক মার্কেটের পশ্চিম পাশে খোকানের দোকান ও দখল করেছেন এই ফুড মিন্টু।
অন্য এক সূত্রে জানা যায় চশমা মিন্টুর তেজগাঁও থানা যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক হওয়ার সুবাদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার দখলে আছে জুতা পট্টিতে তিনটি ঘর,ঘর গুলো আগে দখলে ছিলো ইব্ররাহিম,মিজান,বাদশার।তেজগাঁও থানার এক পুলিশ কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে মামলা ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করেছেন মর্মে ও অভিযোগ আছে চশমা মিন্টুর বিরুদ্ধে ।যুবলীগের কাটুন বাবুলের কাছ থেকে ও মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা নেওয়ার ও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে,তার আপন বড় ভাই মতিন মৃধা তেজগাঁও থানা শ্রমিকলীগের সভাপতি থাকাকালীন সময়ে বড় ভাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন জুতা পট্টিতে ২ টি দোকান দখল করেছেন এখন সেটা তার নিজ দখলে রেখেছেন বলেও অভিযোগ আছে ।
অভিযোগের বিষয়ে ফরাজুল ইসলাম ফরহাদ,চশমা মিন্টু,ফুড মিন্টু,আব্দুল জলিল,ভাগিনা ফারুকদের কে একাধীকবার ফোন করেও কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি,মামলার হওয়ার পর থেকে সবাই আত্নগোপনে চলে যান।
তবে চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মোবারক হোসেন । তিনি বলেন, “শহিদুল্লাহ নামে এক ব্যবসায়ী চাঁদাবাজির মামলা করছেন আমরা আসামীদের ধরার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ।আমরা নিজ উদ্যোগে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করেছি। প্রয়োজনে আরও করবো চাঁদাবাজি বন্ধে আমরা তৎপর আছি।যতোখানি সম্ভব এটাকে নিয়ন্ত্রণে আনবো।