কপিল উদ্দিন কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বেস্টনি ভেঙে বেআইনিভাবে কক্সবাজারের একটি হোটেলে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছে বর-কনেসহ বিভিন্ন ক্যাম্পের প্রায় শতাধিক নারী পুরুষ। যেখানে প্রায় হাজারো রোহিঙ্গা অংশ নেয়। তাদের জন্য আয়োজন করা হয় বিশাল মেজবানও।
বিষয়টি জানতে পেরে রবিবার (১৩ জানুয়ারি) বিকালে কক্সবাজার সদর মডেল থানার একটি টিম হোটেল—মোটেল জোনের সী পাল—১ ও সী পাল—২ হোটেলে অভিযান চালিয়ে ওই বিয়ে পণ্ড করে দেয়। পুলিশ আসার খবরে অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে যায়। এসময় আটক করা হয় নারী ও শিশুসহ ৬৩ জন রোহিঙ্গাকে। জব্দ করা হয় ১২ টি অস্ট্রেলিয়ান ও ৭ টি আমেরিকান পাসপোর্ট। তবে এক অস্ট্রেলিয়ান নাগরিককে ছেড়ে দেওয়া হয়।’
ক্যাম্প—১৯ থেকে আসা ফিরোজ আহমদ নামের এক রোহিঙ্গা জানায়, ‘৪ জন নারীসহ মোট ১২ জন রোহিঙ্গা নিয়ে তিনি এখানে মেজবান খেতে এসেছিলেন। চেকপোস্টে কৌশলে নিরাপত্তাকর্মীদের ফাঁকি দেওয়া হয়।’
একই ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নারী হাসিনা জানান, ‘পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে তিনি কক্সবাজার শহরে দাওয়াত খেতে এসেছেন। শহরে আসতে তেমন কোন বাঁধার সম্মুখিন হননি।’
মহেশখালী কুতুবজোমের ছৈয়দুল আমিন ও ইমাম হোসেন নামের দুই ব্যক্তি ১৩ জন বাংলাদেশী নিয়ে এখানে বিয়েতে আসেন। তারা জানায়, অষ্ট্রেলিয়ায় তাদের ভাই রয়েছে। তার সাথে এক রোহিঙ্গা প্রবাসীর বন্ধুত্ব রয়েছে। সেই সুবাধে তারা বিয়েতে আসেন।’
স্থানীয়রা জানান, সকাল থেকে এখানে একটি বিয়ের রান্না চলছিল। দুপুর গড়াতেই এখানে শত শত মানুষ জড়ো হয়। দিনজুড়ে জনমনে কানাঘুষা চলছিল তারা সবাই রোহিঙ্গা। অবশেষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেই রহস্য উন্মোচন করে।
কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক এইচ,এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ রোহিঙ্গারা যাতে কক্সবাজারে ছড়িয়ে না পড়ে সেটি নিয়ে স্থানীয়রা শংকিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে নানা কৌশলে রোহিঙ্গারা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। ক্যাম্পে বিজিবি ও এপিবিএনের একাধিক চেকপোস্ট রয়েছে। এসব চেকপোস্ট ভেদ করে কিভাবে এতগুলো রোহিঙ্গা আসলো এটি চিন্তার বিষয়। এটি কক্সবাজারের জন্য অশনি সংকেত বটে। রোহিঙ্গা প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ টাস্কফোর্স গঠন করা হউক।’
রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি কক্সবাজারের সভাপতি মাহবুবুর রহমান জানান রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত ক্যাম্পের বেস্টনি পেরিয়ে অবাধে কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গায় বিচরণ করে থাকে। তবে এসব বিষয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর আরও কঠোর নজরদারি বাড়ানো দরকার মনে করেন তিনি।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (অপারেশন) মো. শাকিল হাসান বলেন, ‘রোহিঙ্গা দম্পতির বিয়ের খবর পেয়ে সী পাল হোটেলে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে প্রায় ৬৩ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। এ বিষয়ে পরবর্তীতে পদস্থ কর্মকর্তারা বিস্তারিত ব্রিফিং করবেন।’