ঢাকার আদালত চত্বর থেকে দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের মূল সমন্বয়ক ও তার আশ্রয়দাতাকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। গ্রেফতারদের মধ্যে একজন জঙ্গি ছিনতাইয়ের মূল সমন্বয়ক শিখা। তিনি জেল পলাতক জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবের স্ত্রী।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের আভিযানিক একটি টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে গত ৭ এপ্রিল ২০২৩ ইং নারায়নগঞ্জ জেলার সাইনবোর্ড এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন “আনসার আল ইসলাম” এর জঙ্গী সদস্য ছিনিয়ে নেয়া চক্রের প্রধান সমন্বয়ক ও তার সহযোগীসহ মোট ২ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন,ফাতেমা তাসনীম শিখা (৩১) এবং হুসনা আক্তার এই ঘটনায় পলাতক জঙ্গী আবু সিদ্দিক সোহেল এর স্ত্রী ফাতেমা তাসনীম শিখা পলাতক আসামীগণ এবং হামলাকারী সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করে।
দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান জানান,ফাতেমা তাসনীম শিখা ২০১৪ সালে MIST হতে প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। একপর্যায়ে তার ভাই মোজ্জাম্মেল হোসেন সাইমন এর মাধ্যমে সে আনসার আল ইসলামের আদর্শে দীক্ষিত হয় এবং পরবর্তীতে সায়মনের মাধ্যমে আবু সিদ্দীক সোহেলের সাথে তার বিয়ে হয়। উল্লেখ্য, সোহেল আনসার আল ইসলামের সামরিক (আসকারি) শাখার সদস্য ছিলেন। সোহেলের সাথে বিয়ের পর থেকে সে আরোও গভীরভাবে সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়ে।
২০১৭ সালে মুক্তমনা ব্লগার অভিজিত রায়, দিপন ও নীলাদ্রি নিলয় হত্যা মামলার আসামী হিসাবে আবু সিদ্দিক সোহেল গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারের পর থেকে বিভিন্ন এনক্রিপ্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত শিখা কারাবন্দী সোহলসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ বজায় রেখে সংগঠনের কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু করে।
জঙ্গী ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা সম্পর্কে গ্রেফতারকৃতরা আরও জানায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন “আনসার আল ইসলাম” এর শীর্ষ নেতৃবৃন্দের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা মোতাবেক গত ২০ নভেম্বর ২০২২ ইং বিজ্ঞ আদালতের কার্যক্রম শেষে পুলিশের উপর আক্রমন করে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়। ফাতেমা তাসনীম শিখা (৩১) এই কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। পরিচয় গোপন করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন “আনসার আল ইসলাম” এর সদস্যরা জঙ্গী ছিনতাইয়ের পুরো পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও সমন্বয় করার উদ্দেশ্যে ঢাকা এবং এর পাশ্ববর্তী জেলায় একাধিক আনসার হাউস ভাড়া নেয়।
সেখানে আনসার আল ইসলামের শীর্ষ এবং সামরিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আয়মান এবং শিখাসহ অজ্ঞাতনামা আনসার আল ইসলাম সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত মিটিং করত। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঘটনার প্রায় ৬ মাস আগে থেকে জঙ্গী ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার হতে সিজেএম কোর্টে হাজিরা দেয়ার সময় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয় এবং পরিকল্পনার সমন্বয়ক হিসাবে শিখাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পরবর্তীতে ঘটনার দিন সে সিএমএম কোর্ট এলাকায় এসে পৌঁছে সে কৌশলে তার বাবার কাছ থেকে বিছিন্ন হয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া মশিউর রহমান আয়মান’সহ আনসার আল ইসলামের সদস্যের সাথে যোগাযোগ করে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে।গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ডিএমপি’র কোতয়ালী থানায় সন্ত্রাস ও জঙ্গী বিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।